ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কারও হাতে ইনসাস, কারও হাতে এসএলআর। ভোট ডিউটিতে গিয়ে একদা ‘কিষেনজির দেশ’ অন্ধ্রের মাটিতে এরিয়া ডমিনেশন করছেন বাংলার জঙ্গলমহলের জুনিয়র কনস্টেবলরা। যে অন্ধ্রপ্রদেশে মাওবাদী মোকাবিলা করতে গ্রে-হাউন্ড বাহিনী তৈরি হয়েছিল সেই অন্ধ্রের ভূমিতেই মাওবাদী দমনে প্রশিক্ষিত জঙ্গলমহলের এই বাহিনী ইনসাস-এসএলআর হাতে বুথ সামলাবেন। অবাধে ভোট করতে অভয় দেবেন। যা বাংলার কাছে অন্তত গর্বের বলেই মনে করছে রাজ্য পুলিশ। কারণ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই ওই জুনিয়র কনস্টেবলরা অন্ধ্রের মাটিতে পা রেখেছেন।
আগামী ১১ এপ্রিল, প্রথম দফায় অন্ধ্রপ্রদেশে ভোট। তাই গত ২৮ মার্চ সকালে জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩৬ জন করে ১৪৪ জন জঙ্গলমহল জুনিয়র কনস্টেবল খড়গপুর থেকে স্পেশাল ট্রেনে অন্ধ্র রওনা দেন। তাদের কাজের জায়গা অনুযায়ী ২৯ মার্চ তাঁরা অন্ধ্রের বিজয়নগরম জেলায় পৌঁছান। তারপর ৩০ মার্চ থেকেই সেখানকার স্কোডা, জামি ও এলকোডা থানা এলাকায় তাদের ডিউটি দেওয়া হয়েছে। সেখানেই তারা রুট মার্চ করছেন। করছেন লং রুট পেট্রোলিং। রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাজীব মিশ্র বলেন, “কয়েকদিন আগেই এই বাহিনী অন্ধ্রপ্রদেশে ভোটের কাজে গিয়েছে। এই বাহিনী অন্তত প্রশিক্ষিত।”
[ আরও পড়ুন: ‘রাজ্যে বিজেপি আসবে না, এনআরসিও হবে না’, অমিত শাহকে জবাব ফিরহাদ হাকিমের ]
রাজ্যে পালাবদলের পরই জঙ্গলমহলের বেকার যুবকদের বিপথে যাওয়া ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে পাঁচ হাজার জনকে জঙ্গলমহল জুনিয়র কনস্টেবল হিসাবে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তারপর ২০১২ সাল থেকেই ধাপে-ধাপে এই বাহিনীতে নিয়োগ হচ্ছে। এখন এই বাহিনী তৈরি করতে একদা মাও উপদ্রুত বীরভূম জেলা থেকেও যুবকদের নিয়োগ করছে রাজ্য পুলিশ। প্রথম ধাপে ২০১২ সালে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম থেকে ৪৬০০ জন, দ্বিতীয় দফায় বীরভূম থেকে ২০১৬ সালে ৫০০ জন, তৃতীয় ধাপে ২০১৭ সালে জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ১ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ করা হয়।
এই বাহিনীকে ২০১৫ সাল থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের সালুয়া থেকে অতিরিক্ত সিআইএটি (কাউন্টার এনসারজেন্সি অ্যান্ড অ্যান্টি টেরোরিজম) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অতীতে এই বাহিনী জঙ্গলমহলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ ছাড়াও নানা কাজে সুন্দরবন, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, বর্ধমান, জলপাইগুড়িতে কাজ করেছে। কিন্তু ভোট ডিউটিতে অন্ধ্রের মত ভিন রাজ্যে এই প্রথম পা রাখলেন তারা। ফলে ওই বাহিনীর সদস্যরাও অন্তত গর্বিত।
[ আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কাটা হবে ১২ হাজার গাছ! প্রতিবাদে সরব পুরুলিয়ার আদিবাসীরা ]
যখন মাওবাদী কার্যকলাপে জঙ্গলমহল রীতিমত অশান্ত, তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাহিনী তৈরি করে যেমন জঙ্গলমহলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে অভাব ঠেকান। তেমনই মাও মোকাবিলায় তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যে মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজিদের মোকাবিলা করতে এই বাহিনী তৈরি এবার সেই ‘কিষেনজির দেশ’-ই তাঁদের ভোটের কাজ৷ যদিও ‘কিষেনজির দেশ’ করিমনগর জেলার পেড্ডাপল্লি এখন তেলেঙ্গেনায়। এখন আর সেখানে বা বর্তমান অন্ধ্রে সেভাবে মাও সমস্যা নেই। কিন্তু এই অন্ধ্রেই নকশাল সংগঠনের বীজ পুঁতেছিলেন নিহত কিষেনজিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.