ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: উপকূলবর্তী এলাকা নয়। তা সত্ত্বেও লেজের ঝাপটায় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ (Cyclone Yaas)। তাই তার মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখছে জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়া। ‘যশ যুদ্ধে’ তৈরি জেলার ৫টি ব্লক। সেনাবাহিনী, NDRF মোতায়েন করা হয়েছে। সেফ হোম, কন্ট্রোলরুম থেকে চলবে নজরদারি। আক্ষরিক অর্থেই যেন যুদ্ধের মোকাবিলায় প্রস্তুত পুরুলিয়া (Purulia)।
সব ঠিক থাকলে ‘যশ’ রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়ার পরে শক্তি খানিকটা কমবে। তারপর তার গতিপথ হবে ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) দিকে। সেই গতিপথে রয়েছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বরাবাজার, বলরামপুর, বাঘমুন্ডি, ঝালদা। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের লেজের ধাক্কা খাবে জঙ্গলমহলের এই ৫ ব্লক। ঝড়–বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলাতে রুখাশুখা পুরুলিয়ায় সেনাবাহিনীর আগমন কার্যত এই প্রথম। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বলছে, সাম্প্রতিককালে এমন উদাহরণ নেই। তাছাড়া ঝড়ের জন্য ৪৩১টি সেফ হোমে ১৪,৩০০ জনকে সরিয়ে আনার পদক্ষেপও প্রথমবারের জন্য। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই ঝড় রুট বদলে বান্দোয়ান থেকেই ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “ঘূর্ণিঝড় যশ নিয়ে আমরা একেবারে সতর্ক। জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। নামানো হয়েছে সেনবাহিনী, এনডিআরএফ। ৪৩১টি সেফ হোমে ১৪ হাজারের বেশি মানুষজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া আরও একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছি।”
সোমবার রাত থেকেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে পুরুলিয়ায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে দোসর হয়েছে ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া। বুধবার তার গতিবেগ হতে চলেছে ৮০ থেক ৯০ কিমি প্রতি ঘন্টা। সেই সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও দিয়েছে হাওয়া অফিস। সাইক্লোন ‘যশ’-এর প্রভাবে বৃহস্পতিবারও এই জেলার অধিকাংশ স্থানে ৫০–৬০ কিমি প্রতি ঘন্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই পূর্বাভাসের কথা মাথায় রেখেই পুরুলিয়ায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। শহর পুরুলিয়ার রাজস্থান বিদ্যাপীঠে অস্থায়ী ক্যাম্প করে তাঁরা রয়েছেন। ৭৫ জন এই সেনা পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে কাজ করবে। চারটি এনডিআরএফ (NDRF) টিমের মধ্যে একটি করে বান্দোয়ান, ঝালদা, পুরুলিয়া শহর ও রঘুনাথপুরে রাখা হয়েছে। প্রতি টিমে ২৫ থেকে ২৭ জন রয়েছেন। পুরুলিয়া শহরে থাকা এনডিআরএফ আড়শা ও বলরামপুর এলাকায় কাজ করবে।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন ছাড়াও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে চার মহকুমা পুরুলিয়া সদর, ঝালদা, মানবাজার, রঘুনাথপুরে। এছাড়া তিন পুরসভা পুরুলিয়া, ঝালদা, রঘুনাথপুরও আলাদা করে কন্ট্রোলরুম খুলেছে। জেলার কুড়িটি ব্লকে ব্লক প্রশাসনেরও পৃথক কন্ট্রোলরুম রয়েছে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমে রয়েছে পাঁচটি নম্বর।
জেলা পুলিশ সুপার (SP) এস. সেলভামুরুগন বলেন, “এক জন পুলিশ অফিসারের তত্বাবধানে দশ জন কনস্টেবল–এনভিএফকে নিয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে গাড়ি ছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। থাকছে দুটি মোটরবাইকও।” পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তরফে নাইট সার্ভিস অ্যাম্বুল্যান্সও চালু করা হচ্ছে। বিপর্যয়ের পর পূর্ত বিভাগ কি ভাবে কাজ করবে, তার রেইকি চলছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, তাই ব্লক এলাকায় আগেভাগেই বাড়তি খুঁটি নিয়ে প্রস্তুত বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রতি ব্লকেই বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ক্রেন, ভ্যান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.