Advertisement
Advertisement
Joynagar Moya

এক ক্লিকেই কেল্লাফতে, এবার দুয়ারে জয়নগরের মোয়া

ঘরে বসে বেছে নিন মোয়া-মেনু।

Joynagar moya will available in online

ক্ষীরের পরশে ছোঁয়ানো মোয়া প্রস্তুতির ব্যস্ততা। জয়নগরে। ছবি–অরিজিৎ সাহা

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:December 20, 2024 7:44 pm
  • Updated:December 20, 2024 7:44 pm  

কনকচুর খইয়ের সঙ্গে মেলে খেজুর গুড়। পাকে পাকে তৈরি হয় মহার্ঘ মোয়া। স্বাদে-গন্ধে তার নস্টালজিয়া এখনও বাঙালির হৃদয় ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে। এককথায় যাকে দুনিয়া চেনে ‘জয়নগরের মোয়া’ বলে। কোন রেসিপির জাদুতে আজও সেই আকর্ষণ অটুট, কেমন চলছে কারবার–খোঁজ নিলেন অভিরূপ দাস

ভূতের রাজার জুতো-কিংবা হাততালি লাগবে না। মোয়া মিলবে এক ক্লিকেই। আগ্রা হোক বা আমেদাবাদ। ঘরে বসে বেছে নিন মোয়া-মেনু। www.joynagar.com চালু করেছেন জয়নগর-বহড়ুর মোয়া ব‌্যবসায়ীরা। ওয়েবসাইটে ঢুকলেই জিভে-জল। ক্ষীরের পরশে ছোঁয়ানো জয়নগরের ক্ষীরের মোয়া-পেস্তাকুচি ছড়ানো জয়নগরের প্রিমিয়াম মোয়া থেকে কাজু-কিশমিশ মেশানো জয়নগরের স্ট‌্যান্ডার্ড মোয়া। কী নেই! ঘ‌্যাঁচ করে গাড়ি এসে থামে মোয়ার দোকানের সামনে। থরে থরে মোয়া উঠে যায় তাতে। সেই গাড়িই ইউ টার্ন নিয়ে সোজা কলকাতা বিমানবন্দরে। ‘‘নষ্ট করার সময় কোথায়? মোয়ার আয়ু যে মেরেকেটে সাতদিন।’’ জানিয়েছেন বহড়ুর শ‌্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের রঞ্জিতকুমার ঘোষ।

Advertisement

এই আয়ু বাড়াতেই মাথা তুলেছে মোয়া হাব। মোয়া ব‌্যবসায়ীরা স্বপ্ন দেখছেন, ‘‘রসগোল্লার মতো এক মাস পর্যন্ত তাজা থাকবে মোয়া।’’এ বছরের শুরুতেই এক সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় জানিয়েছিলেন, আড়াই কোটি টাকা দিয়ে মোয়া হাব তৈরি করছে সরকার। পৌঁছে দেখা গেল, জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার মাঠের পাশে সেই মোয়া হাবের বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ। পুরসভার ভাইস চেয়ারম‌্যান রথীন মণ্ডল জানিয়েছেন, মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন এই মোয়া হাব। ৪৯ লক্ষ টাকা ব‌্যয়ে তা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এবার একে একে মেশিন আসবে। এখান থেকেই হবে প‌্যাকেজিং। অত‌্যাধুনিক সে প‌্যাকেজিং এক মাস পর্যন্ত তাজা রাখবে মোয়াকে। শেষ খবর, জলের সংযোগও চলে এসেছে মোয়া হাবে।

বহড়ুর বাসিন্দারা আশায়, মোয়া হাব শুরু হলে দেশের তাবড় মিষ্টি ব‌্যবসায়ীদের পা পড়বে এ তল্লাটে। কর্মসংস্থানও বাড়বে এলাকার। সাধারণ মিষ্টির তুলনায় মোয়ার দাম দ্বিগুণ। তবে তাতে চাহিদা কমেনি বিন্দুমাত্র। একটা ছোট্ট হিসাব দিয়েছেন বহড়ুর ভূমিপুত্র জয়নগর মোয়া-গবেষক ভবানী সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘বহড়ুর বড় দোকান বলতে রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, শ‌্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। শীতের এই তিন মাস একেকটা দোকান প্রায় কোটির কাছাকাছি ব‌্যবসা করে।’’ এই হিসাব শুনে চমকে যান শহরের অনেক মিষ্টি ব‌্যবসায়ী। কলকাতার খ‌্যাতনামা এক মিষ্টির দোকানের কর্ণধারের প্রশ্ন, ‘‘বারো-পনেরো টাকায় ভালো সন্দেশ পাওয়া যায়। সেখানে একটা ভালো মোয়ার এক পিসের দাম পঁচিশ/ত্রিশ টাকা! এমনটা কেন?’’ 

সেই রহস‌্য খোলসা করছেন ব‌্যবসায়ীরা। মোয়া বানানোর শুরুতে, দুটো ডালডার টিন ভর্তি ধান ভেজে খই বের করতে হয়। এরপর সেই খই গুড়ে পাক দিয়ে মুড়কি তৈরি করা। ঠান্ডা হওয়ার জন‌্য নূ‌ন্যতম ঘণ্টা দুয়েক রাখতে হয় এই মুড়কি। আরও বেশি সময় রাখলে আরও ভালো। এরপরের পদ্ধতি ‘কাঁছি মারা।’ ভালো পরিমাণ খেজুর গুড় একটু গরম জলে পাতলা করে ওই মুড়কি চুবিয়ে রাখা হয়। ওই খেজুর গুড় শুষে ফুলে ওঠে মুড়কি। এইটা রেখে দিতে হয় আরও চার ঘণ্টা। এবার খোয়া ক্ষীর-কিশমিশ-কাজু মেশানো।

আর একটা অন‌্যতম উপাদান শ্রী ঘি। গোটা জয়নগর-বহড়ুতে একমাত্র এই ঘি দিয়েই মোয়া তৈরি হয়। মোয়া বিশেষজ্ঞ ভবানী সরকারের বক্তব‌্য, ‘‘তাহলেই বুঝুন। এক বাক্স মোয়া বানাতে কম-সে-কম ঘণ্টা দশেক সময় লাগে। এমনি এমনি তো আর এই দাম নয়। বিদেশ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্ডারও মুখ দেখে আসছে না।’’ বড়দিনের সকালে জয়নগর-বহড়ুতে পা রাখলে কুম্ভমেলার ভিড়। একেকটা দোকানের সামনে দেড়শো-দুশো লোকের লাইন পড়ে যায় সূর্য উঠতেই। এই ভিড়ের অন‌্যতম কারণ কনকচুর ধানের খই।

ব‌্যবসায়ীরা বলেন, এই এলাকার মোয়ার স্বাদ অন‌্যত্র নেই। শহর কলকাতায়-পথে-ঘাটে হলুদ সেলোফেনে চাপা দিয়ে মোয়ার মতো দেখতে কিছু জিনিস বিক্রি হয়। বহড়ুর ব‌্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘চল্লিশ টাকায় প‌্যাকেটে যেগুলো বিক্রি হয় ওইসব মরিশাল ধানের খই। অনেকে আসল জয়নগরের মোয়া ভেবে খেয়েও নেন।’’ নকল বুঝবেন কী করে? মোয়া গবেষক ভবানী সরকারের বক্তব‌্য, সিগারেট-অ‌্যালকোহল-চায়ের নেশা থাকলে জিভে দুই মোয়ার ফারাক সহজে বোঝা যায় না। তবে ওস্তাদ খাইয়েরা তা এক মুহূর্তে ধরে ফেলবেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement