সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মডেল, অভিনেত্রী, রাজনীতিক, বিধায়ক… একই অঙ্গে বহুরূপ জুন মালিয়ার। জীবনে যেমন স্ট্রাগলের দিন দেখে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা শিখেছেন, তেমন বর্তমানে নির্বাচনী ময়দানেও দাপুটে নেত্রী হয়ে উঠেছেন জুন (June Malia)। দলনেত্রীর প্রিয়পাত্রী। সিনে কেরিয়ারের মতো তাঁর স্বল্প রাজনৈতিক কেরিয়ারের মার্কশিটও ঝকঝকে। ফ্ল্যাশলাইটে থাকা এই ‘গ্ল্যামারাস’ নেত্রী-অভিনেত্রীর জীবনসফর কিন্তু ‘গোলাপময়’ ছিল না!
প্রায় তিন দশকের সিনে কেরিয়ার। পঞ্চাশ বসন্ত পেরিয়েও জুন মালিয়া যেন চিরসবুজ। ব্যক্তিগত জীবন হোক কিংবা সিনেমা, বরাবর ছক ভেঙে এসেছেন জুন। প্রথম বিয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা। দুই সন্তানকে একা হাতে মানুষ করে প্রতিষ্ঠিত করা। সবটাই নিজের কৃতিত্বে জুন মালিয়ার। জীবনে বহু চড়াই-উতরাই দেখলেও দমে যাননি কখনও। বরং অদম্য লড়াইয়ের জেরে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রির সুন্দরী, লাস্যময়ী নায়িকাকে নিয়ে একসময়ে কম ‘মুচমুচে’ চর্চা চলেনি! তবে তাঁর নিজস্ব ক্যারিশমায় সেসবও ম্লান হয়ে গিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছিলেন। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই বিধায়ক হয়েছেন। এবার চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ‘দিদি’ তাঁর কাঁধে আরও বড় গুরুদায়িত্ব সঁপেছেন। মেদিনীপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন জুন মালিয়া। রাজনীতির ময়দানে তেতেপুড়ে নিত্যদিন তাঁকে প্রচারে দেখা যাচ্ছে স্বমহিমায়। প্রকৃতপক্ষেই জীবনযুদ্ধের এক দুঃসাহসী সৈনিক তিনি।
নব্বইয়ে দশকে তখন ‘সিঙ্গল মাদার’ শব্দটার সঙ্গে খুব একটা পরিচিত ছিল না মানুষ। খুব অল্প বয়সে প্রথম বিয়ে। দুই সন্তান। সেই বিয়ে ভেঙে যায়। তবে পরিবর্তে স্বামীর কাছ থেকে কোনও খরপোষ দাবি করেননি জুন মালিয়া। তখন তাঁর বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। কী করে বাবাকে বিয়ে ভাঙার কথা বলবেন, ভেবে পাননি। শেষ পর্যন্ত বাবাকে জানান সাহস করে। সেইসময়ে জুনের বাবা একটাই কথা বলেছিলেন, “বাচ্চাদের নিয়ে আমার কাছে চলে এসো। অত ভেবো না।” এই ভরসার হাতটাই তখন জুনের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ করে দিয়েছিল। মা যেমন তাঁকে কড়া শাসনে রাখতেন, তেমনই জুনের বন্ধুও ছিলেন। ভালোবাসাহীন সংসার ছেড়ে আসার সাহস করে দুই সন্তান শিবাঙ্গী ও শিবেন্দ্রকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।
তারপর নব্বইয়ের দশকে জুন মালিয়ার ‘এন্ট্রি’তে টলিউডে একরাশ দমকা হাওয়া বয়ে গেল। তাঁর শারীরিক গড়ন হয়ে উঠল ‘টক অফ দ্য টাউন’। সিরিয়াল, টেলিফিল্মে তখন জুন মালিয়ার দাপট। দর্শকরাও সুন্দরী অভিনেত্রীকে দেখে মুগ্ধ হলেন। এককথায়, তাঁর বেশ কিছু কাজের সুবাদেই বাংলা টেলিভিশন ‘সাবালক’ হয়ে উঠল। তাঁর ফ্যাশন সেন্স থেকে ব্যক্তিত্ব, সবটাই কলেজ পড়ুয়াদের ‘পাঠ্যবই’ হয়ে উঠতে লাগল ক্রমশ। প্রভাত রায়ের হাত ধরে ‘লাঠি’ সিনেমায় ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনির ভূমিকায় অভিনয় করলেন। যেমন সফল বাণিজ্যিক ছবি, তেমন জাতীয় পুরস্কারও জিতেছিল এই সিনেমা। ভিক্টর, দেবশ্রী, প্রসেনজিৎ, শতাব্দী, অভিষেক, ঋতুপর্ণাদের মতো তাবড় প্রথমসারির তারকাদের ভিড়ে জুন মালিয়া নিজের ঝাঁজ বুঝিয়ে দিলেন।
সন্তানরা ছোট থাকায় বহু বলিউডের কাজের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন জুন। তার জন্য কিন্তু আজও কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। বরাবর পরিবার আর কেরিয়ার দুটো সমান গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর কাছে। বর্তমানে জুন মালিয়ার ছেলে পাইলট আর মেয়েও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। তবে ক্যামেরার নেপথ্যে। বিয়ে ভাঙার পরও কিন্তু কোনও লিভ ইন সম্পর্কে থাকেননি। বরং ১৪ বছর ধরে যে বন্ধুত্ব আগলে রেখেছিলেন, সন্তানরা স্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই বন্ধু সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কেই বিয়ে করেছেন। যিনি স্টার স্পোর্টস-এর মার্কেটিং হেড পদে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরে বহু প্রথম সারির স্পোর্টস কোম্পানির গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে হাই লাইফ ম্যানেজমেন্ট নামে এক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। সৌরভ আদ্যোপান্ত ক্রীড়াদুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ভারতের রাগবি বোর্ডের অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সৌরভের সঙ্গেই বিয়ে করেন। অনেকের কাছেই হয়তো আজানা, জুনের স্বামীর দাদুর নামেই আজকের দেশপ্রিয় পার্কের নামকরণ। দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের নাতি সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে তাঁদের সুখের ঘরকন্না। ফিল্মি দুনিয়ার থেকে রাজনীতির লাইমলাইটে এখন অনেক বেশি জুন মালিয়া। লোকসভা ভোটের জন্য কোমর বেঁধে লড়াই চালাচছেন অভিনেত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.