বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: দল যদি দায়িত্ব না দেয় ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে বিজেপিকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। টেলিফোনে দিল্লি থেকে সাফ হুশিয়ারি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর শুক্রবার প্রথম তিনি ‘সংবাদ প্রতিদিন‘-এ মুখ খুললেন। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রাজ্যে দলের ভরাডুবির জন্য বিঁধলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। খোলামেলা অভিযোগ তুললেন, শুভেন্দুর ঔদ্ধত্য, একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব এবং হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য এবার রাজ্যে বিজেপি হালে পানি পায়নি। আলিপুরদুয়ার আসনেও ভোট কমেছে। আদিবাসী ভোট উল্টোপালটা হয়ে যাওয়ায় কোচবিহার আসন হাতছাড়া হয়েছে। তাঁর দাবি, দিলীপ ঘোষ রাজ্যে লোকসভায় প্রার্থী নির্বাচনের দায়িত্বে থাকলে এই ফলাফল হতো না। বিষয়টি তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাবেন।
অসুস্থ স্ত্রীর মেডিক্যাল চেক আপের জন্য এই মুহূর্তে জন বার্লা (John Barla) দিল্লিতে। সেখানে সময় সুযোগ বুঝে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে তার। এদিন কথার শুরুতেই তিনি বুঝিয়ে দেন, এবার টিকিট না পাওয়ার জ্বালা এখনও মেটেনি। দাবি করেন, “আমি প্রার্থী হলে অন্তত ৩ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে আসন বের করে নিতাম।” কিন্তু আপনি থাকতে মনোজ টিগ্গা (Manoj Tigga) সেটা করে দেখাতে পারেনি কেন? বার্লা হাসেন। পালটা প্রশ্ন তোলেন, মনোজ আদিবাসী সমাজে পরিচিত মুখ কি? সে কোনওদিন আদিবাসী আন্দোলনে ছিল? ওই কারণে নিজের বিধানসভা এলাকায় জিততে পারেনি। কিন্তু তিনি নিজের এলাকায় বিজেপিকে (BJP) লিড দিয়েছেন। বারলার কথায়, “শেষ পর্যন্ত আমি ময়দানে নেমে পরিস্থিতি সামলেছি। শুধু মনোজ টিগ্গা নয়। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) আসনে জয়ন্ত রায় এবং দার্জিলিং আসনে রাজু বিস্তাও হেরে যেত যদি আড়াই লক্ষ খৃস্টান ভোট ধরে না রাখতাম।” এর পরই জানান, কোচবিহারের (Cooch Behar)দিকে মন দিতে পারেননি। সেখানেও আদিবাসী ও খ্রিস্টান ভোট রয়েছে। সেখানকার বিজেপি নেত্রী মালতি রাভা বলেছিলেন, কিন্তু সময় দিতে পারেননি। ফলে নিশীথ প্রামাণিক পিছিয়ে যান।
যদিও জন বার্লার অভিযোগ, মনোজ টিগ্গা, জয়ন্ত রায়, রাজু বিস্তা জিতলেও ভোটের ব্যবধান উদ্বেগজনকভাবে কমেছে। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে কঠিন পরিস্থিতি হবে। এবার এতো ভালো পরিস্থিতিতেও দল ভোট ধরে রাখতে পারেনি। এর প্রধান কারণ শুভেন্দু অধিকারীর হঠকারিতা। তিনি বলেন, “আমি মনোজ টিগগাকে দলের জেলা সভাপতি করলাম। শুভেন্দু কোনও আলোচনা না করে ওকে প্রার্থীর জন্য নাম সুপারিশ করে সর্বনাশ ডাকলেন।” তাঁর খোলামেলা অভিযোগ, কোচবিহারে শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) জন্য অনন্ত মহারাজ বিগড়েছেন। ফল কি হয়েছে সবাই দেখেছে। শুভেন্দুর ঔদ্ধত্য, একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব এবং হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য রাজ্যে বিজেপির দফারফা হয়েছে। নিচুতলার নেতাকর্মীদের কথা না শুনে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তরবঙ্গে দলকে শেষ করার মূলেও তিনি। দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) থাকলে এই দুর্দশা হতো না বলেও দাবি করেন বার্লা।
এবার টিকিট না পাওয়ার আক্ষেপের ক্ষত এখনও সারেনি। তিনি জানান, ২০০৫ সাল থেকে আদিবাসী (Tribal) সংগঠন চালাচ্ছেন। ডুয়ার্স-তরাইয়ের ১২টি এলাকায় ওই সংগঠনের প্রভাব রয়েছে। বিজেপি ছাড়াই ২০১৩ সালে ২০৮ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে নির্বাচিত করে ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে নিয়েছেন। অথচ শুভেন্দু কলকাতায় ঠান্ডা ঘরে বসে এখানকার নেতা ঠিক করছেন। এরপরই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, “মনোজ টিগ্গা জিততে পারে। কিন্তু ওকে কে নেতা হিসেবে মানবে? আমি মানব না। আদিবাসী সমাজও মানবে না।”
সামনেই ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন। কী হবে সেখানে? বার্লার সাফ জবাব, “দল আমাকে দায়িত্ব না দিলে তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন পুরোটাই দলের ব্যাপার। দল দায়িত্ব না দিলে আমি আমার মতো কাজ শুরু করব।” যদিও কী কাজ বার্লা করবেন,তা স্পষ্ট করেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.