ধীমান রায়, কাটোয়া: পাঁচবছর আগে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেই গা-ঢাকা দিয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল্লা শেখ। তারপর থেকে প্রতিবেশীরা আসাদুল্লার মুখ দেখতে পাননি। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে এসটিএফের হাতে ধরা পড়েছে জেএমবি জঙ্গি আসাদুল্লা। এই খবর সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পেরেছেন তার আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। আর তারপর থেকেই সকলে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
ধৃত জঙ্গির দাদা এবনেসউদ শেখ বলেন, ‘যদি আমার ভাই দোষী হয় তাহলে চাইব ওর সাজা হোক। তবে নির্দোষ হলে আশা রাখি দ্রুত ছাড়া পেয়ে যাবে।’ খাগড়াগড় কাণ্ডের পর থেকেই আসাদুল্লার খোঁজ চলছিল। পাশাপাশি এস টি এফের সন্দেহ বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণেও জড়িত ছিল আসাদুল্লা শেখ(৩৫)।
বলগোনা গুসকরা সড়কপথের পাটনা মোড় থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে ভাতারের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে বাড়ি জেএমবি জঙ্গি আসাদুল্লার। মাটির একতলা বাড়িতে আ্যসবেসটসের ছাউনি। মঙ্গলবার দেখা গেল বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে। মাটির দেওয়াল বাইরে দিকে ছেডে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি তালাবন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে আসাদুল্লারা ৬ ভাই। দাদা এবনেসউদ বলেন, ‘ভাই বাইরে থাকত। শুনেছি চেন্নাইয়ে একটি ইট তৈরির কারখানায় কাজ করত। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসত।কিন্তু, ও কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের কয়েকদিন আগেও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে দেখা গিয়েছিল আসাদুল্লাকে। তবে বিস্ফোরণের পরের দিনেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। তার কয়েকদিনের মধ্যেই দুই মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামে চলে যায় স্ত্রী হালেমা বিবি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট খাগড়াগড়কাণ্ডে যুক্ত ১০ জঙ্গির সাজা ঘোষণা হয়। তাদের মধ্যে আসাদুল্লার শ্বশুরবাড়ি কুলসোনা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কালামকেও দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করে আদালত।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এনআইএ আসাদুল্লার জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। তারপর এনআইএর তরফে কয়েকদফা নোটিস যায় আসাদুল্লার বাড়িতে। কিন্তু, সেই থেকে আসাদুল্লার হদিশ পাননি গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছে, দাদা এবনেসউদ শেখকেও তারপর তলব করেছিল এনআইএ। তিনিও দুবার হাজিরা দিয়েছিলেন এনআইএর দপ্তরে। ধৃত জঙ্গি আসাদুল্লার বাবা ইরফান শেখ খাগড়াগড় ঘটনার কয়েকবছর আগেই মারা গিয়েছেন। মা আসেদা বিবি বর্তমানে অসুস্থ। তিনি কথা বলার মত অবস্থায় নেই বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আসাদুল্লার গ্রেপ্তারির বিষয়েও কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন প্রতিবেশীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আসাদুল্লা শেখ বাইরে বেশিরভাগ থাকত। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসত। সে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত কি জড়িত নয় তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.