সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ধূপগুড়ি এবং তুফানগঞ্জের পর ফের হারানো প্রেমের সন্ধানে প্রেমিকার বাড়ির সামনে ফের প্রেমিকের ধরনা। এবারের ঘটনাস্থল বাগনান থানার নবাসন গ্রাম। আট বছরের প্রেম ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শনিবার বেলা এগারোটা থেকে প্রেমিকার বাড়ির সামনে ধরনায় বসলেন বছর চব্বিশের বিরহী প্রেমিক।
গত জুন মাসে ধূপগুড়ির অনন্ত বর্মন প্রেমিকা লিপিকা বর্মনের কাছে তার আট বছরের ভালবাসা ফেরত চেয়ে ধরনায় বসেছিল। তার কিছুদিন পরেই একই পদ্ধতিতে হারানো প্রেম ফিরে পেতে চেয়েছিল তুফানগঞ্জের সঞ্জয় দাস। শেষ পর্যন্ত সমস্ত বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে অনন্তর গলাতেই মালা দিয়েছিল লিপিকা বর্মন। সেই ঘটনা যে আজও ব্যর্থ প্রেমিকদের হারানো প্রেম ফিরে পেতে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে তা বাগনানের ঘটনায় আবার একবার প্রমাণ হল। শনিবার নবাসনে প্রেমিকা সোমা ওরফে সোনালী দেঁড়ের বাড়ির সামনে ভালবাসা ফেরানোর দাবিতে ধরনায় বসে পাশের গ্রাম পিপুল্যানের বাসিন্দা শিবনাথ রায় নামের ২৪ বছরের এক যুবক। তাঁর দাবি, গত আট বছর ধরে সোমার সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। কিন্তু সে স্থানীয় একটি পেপার মিলে পাঁচ হাজার টাকার মাইনের চাকরি করে বলে সোমার দাদা ও বাবা তার সঙ্গে সোমার বিয়ে দিতে রাজি নন।
কিছুদিন যাবত সোমার বাড়ির লোকজন সোমাকে জোর করে ভুল বুঝিয়ে শিবনাথের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। বাড়ির ভয়ে সোমা তাঁকেও এড়িয়ে চলছে। শিবনাথ তাঁর দাবির সপক্ষে বেশকিছু ছবি ও চিঠি দেখায়। দুটি ছবি দেখিয়ে সে বলে তারা দক্ষিণেশ্বর ও উলুবেড়িয়ার কালীমন্দিরে গিয়ে সেই ছবিগুলি তুলেছে। এছাড়াও শিবনাথকে লেখা সোমার চারটি প্রেমপত্রও সে দেখায়। এইসব ছবি ও চিঠি পোস্টার আকারে সোমার বাড়ির পাশে লাগিয়ে শিবনাথ ধরনায় বসেন। এছাড়াও তিনি লেখেন, “তোরা যে যা বলিস ভাই আমার ভালবাসা ফেরত চাই।” “তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনালীকে চাই।” সোমার উদ্দেশে তার পোস্টার, “জীবন-যন্ত্রণা তুমি বুঝলে না, ফিরে এসো আমার কাছে এই আমার কামনা।”
এরপর শিবনাথ দফায় দফায় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পুরো ঘটনাটা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে থাকে। নিমেষের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এই ঘটনা। নবাসন গ্রাম উৎসুক মানুষের ভিড়ে ভরে যায়। সোমার মা বর্ণালী দেঁড়ে জানান তাঁর একমাত্র মেয়ে সোমা এখন বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাঁরা কিছুদিন আগে দু’জনের বিয়ের বিষয়ে শিবনাথের বাড়ির লোকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে শিবনাথের বাবা বিয়ের যৌতুক হিসাবে মোটা টাকা দাবি করায় তাঁদের পক্ষে শিবনাথের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে যখন নাবালিকা ছিল তখন ভুল করে ওই ছেলেকে ভালবেসেছিল। এখন সে সাবালিকা হয়েছে, এখন সে সবকিছু বুঝতে শিখেছে। তাই এখন সে আর ওই ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি নয়।
শিবনাথের মাসি রীতা রায় বলেন, শিবনাথ ও সোমা উভয়ে উভয়কে ছোট থেকে ভালবাসে। এখন মেয়েকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা চান, শিবনাথের জীবনের হারানো আট বছরের ভালবাসা মেয়েপক্ষ ফেরত দিক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গিয়েছে, মেয়েপক্ষ এই বিয়ের বিষয়ে কোনও সম্মতি দেয়নি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীদের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষকে নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.