সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দলের হুইপ থাকা সত্ত্বেও ঝালদা পুরসভায় অনাস্থা ঠেকানো গেল না। পুরপ্রধান বিজ্ঞপ্তি জারি করে তলবি সভার দিন ২৭ জানুয়ারি বদল করেন। কিন্তু শাসকদল তৃণমূলের ৫ কাউন্সিলর কংগ্রেসের ২ কাউন্সিলরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ৭-০ ভোটাভুটিতে তৃণমূলের পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণ করলেন। প্রায় দু’বছর আগে এই পুরসভায় নির্বাচনের পর ক্ষমতা দখলের জন্য শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই ছিল। সেখানে সেই ক্ষমতা দখলের বিষয়েই তৃণমূলের ৫ কাউন্সিলর কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাল।
বুধবার পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায় নজিরবিহীন এই ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল। এবার নতুন পুরপ্রধান কে হবেন তা নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “এদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে ঝালদা শহর তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছি। সমগ্র বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই তলবি সভা বৈধ নয়। আমি এই বৈঠক পিছিয়ে ২৭ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করি। আমি যথারীতি পুরপ্রধান হিসাবে কাজ করে যাব। এর প্রেক্ষিতে ওঁরা যদি কোনও পদক্ষেপ করেন তার প্রেক্ষিতে আমিও আইনি পদক্ষেপ নেব।” ফলে ঝালদায় ক্ষমতা দখলে আইনি যুদ্ধে আবার সেই হাই কোর্টের দরজায়!
গত ৭ ডিসেম্বর পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা আসার পর পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব পুরুলিয়া শহরের দুবার ও ঝালদায় একবার বৈঠক করে অনাস্থা ঠেকাতে কড়া বার্তা দেয়। এই তিনবার বৈঠকের মধ্যে রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পুরুলিয়া এসে দলীয় কাউন্সিলরদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়। রাজ্য তৃণমূলের নির্দেশ অনুযায়ী পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া গত মঙ্গলবার হোয়াটসঅ্যাপে দুভাগে বিভক্ত হওয়া দলের মোট ১০ কাউন্সিলরকে হুইপ দিয়ে অনাস্থা বৈঠকের তলবি সভায় গরহাজির থাকার কথা বলেন। একইসঙ্গে এই অনাস্থার তলবি সভার তারিখ ২৭ জানুয়ারি বেলা ১২টার সময় পিছিয়ে দিয়ে গত মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তির কথা মানেননি অনাস্থা আনা তৃণমূল কংগ্রেসের ৫ ও কংগ্রেসের ২ কাউন্সিলর। এমনকি শাসকদলের ৫ কাউন্সিলর দলের ওই হুইপকে অমান্য করে তলবি সভার সময় বেলা সাড়ে ১২টার আগেই উপস্থিত থাকেন। তৃণমূলের যে ৫ কাউন্সিলর অনাস্থা এনেছিলেন তাঁরা হলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সুদীপ কর্মকার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রিজওয়ানা খাতুন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জবা মাছোয়ার ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ণিমা বাগতি। এছাড়া কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিপ্লব কয়াল ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন উপ- পুরপ্রধান পূর্ণিমা কান্দু।
এদিনের এই সভাকে ঘিরে যাতে কোনরকম ঝুট-ঝামেলা না হয় তাই ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। শাসকের ৫ ও কংগ্রেসের ২ মোট সাত কাউন্সিলর পুরপ্রধানের ঘরে তলবি সভায় পুরপ্রধানকে অপসারিত করেন। এদিন তলবি সভায় হাজির থাকা শাসক দলের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল বলেন, “৭-০ ভোটে পুরপ্রধানকে অপসারিত করা হয়েছে। এর বেশি কিছু এখনই বলতে পারব না।” ঝালদা পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা এই তলবি সভায় অংশ নেওয়া কংগ্রেস কাউন্সিলর বিপ্লব কয়াল বলেন, “গত দু’বছর ধরে এই পুরসভায় কোনও কাজ হয়নি। এমন পুরপ্রধান আগে দেখেনি ঝালদা। সেজন্যই আমরা তাঁকে অপসারণ করলাম।”
এদিন অবশ্য দলীয় নির্দেশ মেনে এই সভায় ছিলেন না শাসকদলের আরও পাঁচ কাউন্সিলর। যাঁরা গত ৬ সেপ্টেম্বর নির্দল কাউন্সিলর তথা পুরপ্রধান শিলা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাঘমুন্ডিতে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর হাত ধরে যোগদান করেন। আর ওই যোগদানের পরেই এই পুরসভার সমীকরণটা বদলে যায়। পুরপ্রধান শিলা দেবীকে সরাতে একজোট হয়ে যান শাসকের ৫ ও কংগ্রেসের ২ কাউন্সিলর। অনাস্থার চিঠিতে সই করেন এই সাত কাউন্সিলর। তবে পুরপ্রধানের পক্ষে রয়েছেন তাঁর সঙ্গে যোগদান করা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা ৪ কাউন্সিলর। তাঁরা হলেন নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু, বিজয় কান্দু, পিন্টু চন্দ্র ও সোমনাথ (রঞ্জন ) কর্মকার। শাসকদলের কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার বলেন, “দলের জেলা সভাপতি হুইপ জারি করে এদিনের অনাস্থার তলবি সভায় যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও আমাদের ৫ কাউন্সিলর যান। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই দল ব্যবস্থা নেবে। ” শিলা চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে আসার পরে এই পুরসভায় আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে যায় দুই শিবির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.