শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ইসিএলের খনি ভরাট করার জন্য প্রয়োজন বালি। বরাত পাওয়া প্রাইভেট সংস্থার বালির গাড়ি অবৈধ, এই অভিযোগ তুলে গাড়ি আটকে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন জামুরিয়ার তৃণমূল নেতা তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। সরকারি কাজে বাধার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই তৃণমূল নেতা। সংস্থার তরফে কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে তোলাবাজির। ঘটনার প্রেক্ষিতে সংঘাত লেগেছে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে জামুরিয়া থানার।
জামুরিয়া পুলিশের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ তুলে নিজেদের দলীয় এবং সরকারি পদ থেকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামুড়িয়ার পরাসিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, সমিতির সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, অবৈধ এবং দূষিত বালি, মাটি পরিবহণ তাঁরা মানুষের স্বার্থে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ ওই বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করছে। মানুষের হয়ে নয়। এই নিয়ে সরগরম জামুরিয়ার রাজনীতি।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বেআইনি ও অবৈধ কাজ বরদাস্ত নয়। তার পরই হঠাৎ সক্রিয় জামুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতারা। মাটি, বালি, ফ্লাইঅ্যাশ বোঝাই গাড়ি দেখলেই অভিযান শুরু নেতাদের। এই নিয়েই তৃণমূল নেতাদের একাংশের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘাত লেগেই রয়েছে। পালটা বেসরকারি সংস্থার অভিযোগ অভিযানের নামে তোলাবাজিতে নেমেছে ওই তৃণমূল নেতারা।
ইসিএলের কাজে বাধা দেওয়া ও তোলাবাজির অভিযোগ উঠল জামুড়িয়া ব্লকের জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল নেতা উদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে। ইসিএলের টেন্ডার পাওয়া বেসরকারি সংস্থার এজেন্ট মধুসূদন সিং ও প্ল্যান্ট ইনচার্জ অসীম চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতে জামুড়িয়া থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই উদীপ সিং ও তার ৬ সঙ্গী-সহ পঁচিশজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। শনিবার রাতে তাদের মধ্যে দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা হল রঘুপদ মণ্ডল ও মলয় মণ্ডল।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা উদীপ সিং। পাল্টা তিনিও জামুড়িয়া থানার ওসি রাজশেখর মুখোপাধ্যায়, ইসিএল ও ওই বেসরকারি সংস্থার আধিকারিককে আক্রমণ করেন। বলেন, “আমি জামুড়িয়া এলাকায় মাটি ও বালির বেআইনি কারবার বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছি। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে এফআইআর করা হয়েছে।” কার্যত হুমকির সুরে তিনি বলেন, “দলীয় নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি। দল যদি পাশে না দাঁড়ায় তাহলে পদত্যাগ করব। ধরনায় বসব।” তিনি আরও বলেন, “আমি ইতিমধ্যে ওই বেসরকারি সংস্থার আধিকারিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছি। আর কি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই পরামর্শ করছি।”
অন্যদিকে, দায় এড়িয়ে গিয়েছেন জামুরিয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং। বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব। বিষয়টি জানা নেই।” পাণ্ডবেশ্বর প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, “তৃণমূলে যারা থাকেন তারা স্বাধীনভাবে থাকতে পারেন না। বা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকারও নেই। তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও দলের তরফ থেকে ও পুলিশ প্রশাসন থেকে অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলা তোলা হবে উদীপকেই। সম্মান নিয়ে যদি বাঁচতে চান তাঁকে তৃণমূল ছাড়তে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে আমরা তাঁর পাশে থাকব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.