নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: রাত বাড়লেই উড়ে আসছে ঢেলা! প্রথমে ভূত ভাবলেও পরে বোঝা গেল এ অশরীরী নয়, মানুষেরই কুকীর্তি। কিন্তু অন্ধকারে ধরা যাচ্ছে না তাদের। তাড়া করলেই যমুনা পেরিয়ে চম্পট দিচ্ছে। আর ঢেলার ভয়ে গত দেড় মাস ধরে হেলমেট পরে রাত কাটাচ্ছেন জলপাইগুড়ির কোনপাকরির সরকার পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
খবর পেয়ে তিনদিন গ্রামে পুলিশ এসেছিল। পুলিশের সামনেই উড়ে এসে পড়েছে ঢিল। চাক্ষুষ প্রমাণ পেলেও অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার গ্রামবাসীদের কথা শুনতে গ্রামে এসেছিলেন জাতীয় মানবাধিকার পর্ষদের সদস্যরা। সংগঠনের সদস্য নীহার মজুমদার জানান,প্রাথমিকভাবে তাঁদের অনুমান ঘটনার পিছনে বালি মাফিয়াদের হাত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পদস্ত আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানাবেন তাঁরা।
সরকার পাড়া গ্রামের গা ঘেষে বয়ে চলেছে যমুনা নদী। কৃষি প্রধান এই এলাকায় গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে একাধিক চা বাগান। চাষের জমি আর চা বাগানে ঘেরা সরকার পাড়া গ্রামে কয়েক শো পরিবারের বসবাস। সম্প্রতি যমুনা নদী থেকে বালি পাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ছিলেন কয়েকটি পরিবার। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অবৈজ্ঞানিকভাবে বালি উত্তোলনের ফলে চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে সক্রিয় হয় পুলিশ। ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করায় আপাতত বন্ধ বালি পাচার। তাতে স্বস্তি ফিরলেও রাতের এই অশান্তি ঘুম কেড়ে নিয়েছে বাসিন্দাদের।
অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই শুরু হচ্ছে ঢিলের উপদ্রব। ভবেশ রায় নামে এক বাসিন্দা জানান, নিয়মিত রাত বারোটা পর্যন্ত ঢিলের উপদ্রব চলছে। ঢিলের আঘাতে বেশ কয়েকটি বাড়ির টিন ফুটো হয়ে গিয়েছে। মাথা বাঁচাতে হেলমেট পড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শ্যামল রায় নামে এক বাসিন্দা জানান, দিন কয়েক আগে চা বাগানের ভিতর থেকে একজনকে ঢিল ছুঁড়তে দেখেছিলেন। কিন্তু অন্ধকার থাকায় চিনতে পারেননি। বেশ কয়েকজন মিলে তাড়া করতেই যমুনা নদী পার হয়ে পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি। কিন্তু তারপরেও বন্ধ হয়নি অত্যাচার।
গড়ালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গিরিবালা রায় জানান, “গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুনে এক রাতে পরিস্থিতি দেখে আসার জন্য স্বামীকে পাঠিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর স্বামীর উপস্থিতিতে একের পর এক ঢিল উড়ে আসে। পরে পুলিশকেও খবর দেন প্রধান। পুলিশ কর্মীদের উপস্থিতিতেও একই ঘটনা। তিন রাত ধরে গ্রামের এদিক-ওদিক তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি।” এদিকে ঢিলের উপদ্রব আরও বেড়ে গিয়েছে। বালি পাচারের বিরুদ্ধে যারা সবচাইতে বেশি সরব ছিলেন, তাঁদের বাড়ির উপর হামলা সবচেয়ে বেশি বলে অভিযোগ।
এদিন জাতীয় মানবাধিকার পর্ষদের সদস্যরা গিয়ে গ্রাম বাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। সংগঠনের সদস্য নীহার মজুমদার জানান, গত চুয়াল্লিশ দিন ধরে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। ঢিলের আঘাতে একাধিক ঘর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। মাথায় আঘাত লাগলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। পেছনে বালি মাফিয়াদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তাঁরা। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর নজরে আনবেন বলে জানিয়েছেন। কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার জানান, সরকার পাড়ার ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা। একাধিকবার পুলিশ গিয়েছে। আড়ালে থেকে যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.