শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে মানুষ। যতদিন যাচ্ছে উন্নত হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। কিন্তু কয়েনের উলটোপিঠের মতোই এখনও অন্ধবিশ্বাসে নিমজ্জিত বহু মানুষ। গ্রাম বাংলায় এখনও প্রবেশ করেনি শিক্ষার আলো। আর তাই কুসংস্কারের শিকার হতে হল এক শিশুকে।
অন্ধবিশ্বাস যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রাশি দাস। চার বছর বয়সের এই শিশুকে নিজের শরীর দিয়ে ওঝার কুকর্মের মাসুল দিতে হল। ময়নাগুড়ির দোমহনী এলাকার বাসিন্দা দুখী দাসের মেয়ে রাশি। দুখীদেবীর স্বামী ছেড়ে গিয়েছেন অনেকদিন। মাস তিনেক আগে খেলার ছলে আগুনের কুণ্ডে পড়ে যায় রাশি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কোনও সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে স্থানীয় এক ওঝার দারস্থ হয় পরিবার। ওঝা ভানু দাস আশ্বাস দেয়, শিশুকে সে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলবে। কিন্তু সুস্থ করার নাম করে ওঝা যা করল, সে দৃশ্য কল্পনা করলেও গা শিউরে ওঠে। দুধের শিশুর পোড়া চামড়া ব্লেড দিয়ে কেটে সেই অংশে নারকেল তেল লাগিয়ে দিল ওঝা। পোড়া চামড়া কাটার সময় অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে শিশুটি। তা সত্ত্বেও নিজের কীর্তিকলাপ চালিয়ে যায় ওঝা।
১৫-২০ দিন এই চিকিৎসা চলার পর, সুস্থ হওয়া তো দূর অস্ত, পায়ে পচন ধরতে শুরু করে শিশুটির। খবর যায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। শেষমেশ তাদের চেষ্টায় শিশুটিকে ভরতি করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় রাশিকে কলকাতা নিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১ মাস ১০ দিন চিকিৎসার পর জলপাইগুড়ি ফেরে রাশি। অনেক প্রচেষ্টায় দু’টি পা বাঁচানো গিয়েছে রাশির। তবে বাঁ পায়ের পাঁচটি আঙুল কাটা পড়েছে। ডান পায়ের আঙুলও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত।
যে ওঝার কুকীর্তির জন্য আজ রাশির এই অবস্থা সেই ওঝা ভানু দাসের বিরুদ্ধে ময়নাগুড়ি থানায় খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ওঝার কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.