শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: রোজ আট ফুট উঁচু পাঁচিল দিব্যি পেরোনোর অভ্যাস। সেই আত্মবিশ্বাসই কাল হল। শুক্রবার দশ বছরের ছেলেটির মাথায় যেন অ্যাডভেঞ্চারের লোভ চেপে বসেছিল। একেবারে ফিল্মি কায়দায় উঁচু পাঁচিল পেরোনোর চেষ্টা। স্টেপের গণ্ডগোল হয়ে যাওয়ায় গলায় ফাঁস চেপে বসে। যাবতীয় দস্যিপনা শেষ। জলপাইগুড়ির মোহিতনগরে এভাবে অকাল ঝরে যায় একটি কুঁড়ি। মৃতের নাম প্রদীপ শীল। ছোট্ট প্রদীপ নিভে যাওয়ায় স্থানীয়দের যাবতীয় ক্ষোভ পাঁচিল মালিকের দিকে। পাঁচিল ভেঙে তারা প্রতিবাদ জানান।
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মোহিতনগর। এই এলাকার বামনপাড়ায় বাস প্রদীপ শীলের। পাড়ায় ডানপিটে হিসাবে পরিচিত ছিল তৃতীয় শ্রেণির এই ছাত্র। বামনপাড়ায় কয়েক বছর আগে স্থানীয় এক ব্যক্তি কারখানার জন্য ১২০ বিঘে জমি কিনেছিলেন। জমি ঘিরতে তিনি আট ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়েছিলেন। প্রাচীর থাকলেও, এলাকার কচিকাঁচারা ওই বাধা টপকে বিশাল জমিকে খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলেছিল। পাঁচিল বেয়ে রোজ ঘেরা জমিতে খেলতে যেত প্রদীপের মতো এলাকার অনেক বাচ্চা। দশ বছরের প্রদীপ পাঁচিল দিব্যি বেয়ে যেত। তবে শুক্রবার ঘটে যায় অঘটন। স্থানীয় সূত্রে খবর, দশ বছরের প্রদীপ পাঁচিল টপকানোর জন্য দড়ির সঙ্গে বেল্ট বেধেছিল। বেল্ট হাতে জড়িয়ে পাঁচিল পেরোনোর ছক কষেছিল সে। টিভি দেখতে ওস্তাদ প্রদীপ ওই দিন সিনেমার কায়দায় কংক্রিটের প্রাচীর পেরোতে চেয়েছিল। তবে স্টেপ হেরফের হয়ে যাওয়ায় বেল্ট গলায় জড়িয়ে যায়। সন্ধ্যার সময় সে বাড়ি না ফেরায় প্রদীপের পরিজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পাঁচিলের কাছে এসে তারা বুঝতে পারেন সব শেষ।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছোট প্রদীপ। তার বাবা গৌতম শীল ক্ষৌরকার। মা গৃহবধূ। চনমনে প্রদীপের অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে পাঁচিলের ওপর। হাতুড়ি দিয়ে বাসিন্দাদের একাংশ শনিবার সকালে পাঁচিল ভেঙে দেয়। স্থানীয়দের বক্তব্য, জমি ঘিরে দেওয়া হলেও একদিক খোলা রাখা হলে এই ঘটনা ঘটত না। বাচ্চারা নিশ্চিন্তে খেলতে যেতে পেরত। পাশাপাশি মৃতের পরিবার জমির মালিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রদীপের খেলার সঙ্গীরা এই ঘটনায় হতভম্ব। তবে তার পরিবারের আক্ষেপ, সিনেমার মতো স্টান্ট না নিলে হয়তো বেঁচে যেত প্রদীপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.