সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমান স্টেশনের নাম বদল নিয়ে এবার তীব্র আপত্তি তুলল জৈন সম্প্রদায়। রেলমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জৈন সম্প্রদায়ের আপত্তির কথা জানিয়ে টুইট করা হয়েছে। বর্ধমান জৈন মাইনরিটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির তরফে রেলমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তিত হলে সারা দেশের সংখ্যালঘু জৈন সম্প্রদায়ের আবেগকে আঘাত করা হবে। যদিও সোমবার সন্ধে পর্যন্ত রেলমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে টুইটের কোনও উত্তর মেলেনি।
রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও জৈনদের এই দাবিতে সহমত পোষণ করেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, নাম পরিবর্তনের আগে বর্ধমানবাসীর মতামত নেওয়া প্রয়োজন। নামের সঙ্গে আবেগ, ইতিহাস জড়িয়ে থাকে। বর্ধমানের মানুষ পরিবর্তন চাইলে তা হোক। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এনিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন বহু মানুষ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক অরূপকুমার চৌধুরি দাবি করেছেন, স্টেশনের নাম পরিবর্তন না করে বরং তার সংলগ্ন এলাকায় যে বৃহত্তম ঝুলন্ত রেল ওভারব্রিজ গড়া হচ্ছে, তার নামকরণ হোক বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর নামে।
২০ জুলাই বিহারের পাটনায় বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। বিপ্লবী কন্যা ভারতী দত্ত বাগচীর বাড়িতে ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। ভারতীদেবী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ফোনে জানিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত জংশন নাম করা হবে। বটুকেশ্বর দত্তর বাড়ি বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের ওঁয়াড়ি গ্রামে। বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতিরক্ষা ও সংরক্ষণ কমিটির তরফে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবীর নামে করার দাবি ওঠে৷ তার প্রেক্ষিতেই শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ওই ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন বিপ্লবী কন্যা৷
কিন্তু বর্ধমানের নামকরণ নিয়ে দুটি মত রয়েছে। ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন, ২৪তম জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমানা স্বামীর নামানুসারেই এখানকার নাম হয়েছে বর্ধমান। জৈন সম্প্রদায়ের কল্পসূত্র অনুযায়ী, মহাবীর আস্তিকনগরে বেশ কিছুকাল কাটিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই আস্তিকনগরের নামই হয় বর্ধমান। অপর একটি মতে, এই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি ও ক্রম উন্নতির কারণে নাম হয়েছে বর্ধমান। তবে জৈন তীর্থঙ্করের নামানুসারেই শহরের নাম বর্ধমান হয়েছে, এমনটাই বিশ্বাস করেন বেশিরভাগ মানুষ। বর্ধমান জৈন মাইনরিটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক রাজসিং ভুতোরিয়া বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের কথা জানতে পেরে রেলমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে টুইট করেছি। সত্যিই তা করা হচ্ছে কি না, জানতে চেয়েছি। আর এটা সত্যি হলে শুধু জেলা নয় সারা দেশের সংখ্যালঘু জৈন সম্প্রদায়ের আবেগকে আঘাত করা হবে। কিন্তু রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর পাইনি আমি।”
এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিষয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বর্ধমান শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে নাম পরিবর্তন না করার পক্ষে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। ‘গাছমাস্টার’ বলে পরিচিত নাদনঘাট হাইস্কুলের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক অরূপকুমার চৌধুরি। তিনি বলেন, “স্টেশনের নাম অপরিবর্তিত রাখা উচিৎ। কারণ মানুষের গন্তব্য কোনও না কোনও স্থান। ব্যক্তি নয়। বরং নির্মীয়মাণ রেল ওভারব্রিজটির নাম হোক বটুকেশ্বর দত্তর স্মরণে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.