অভিরূপ দাস: দেওয়ালে জায়গা নেই। আকাশ ঢেকেছে চেন ফ্ল্যাগে। অগত্যা গাছের গায়েই পেরেক ঢুকে ফ্লেক্স, ফেস্টুন! এমনটা ঘটলে ঠাঁই হতে পারে শ্রীঘরে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ রয়েছে। বনদপ্তরের আইনও রয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রি (প্রোটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন ইন নন ফরেস্ট এরিয়া) অ্যাক্ট ২০০৬-এ স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, যদি কেউ বনদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত গাছের কোনও ক্ষতি করে, সেক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এমনকী এক বছর জেলও হতে পারে অভিযুক্তের। নিয়ম অনুযায়ী ফুটপাথের গাছ তো বটেই, এমনকী ব্যক্তিগত মালিকানার ডালপালাতেও পেরেক, গজাল পুঁততে গেলে প্রশাসন ও বনদপ্তরের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
তবে বাস্তব চিত্র অন্যরকম। ইতিমধ্যেই জেলার প্রচুর বট-অশ্বথ-অশোকে উড়ছে রাজনৈতিক বা বিজ্ঞাপনী নিশান। গাছের গায়ে আটকানো ফ্লেক্স থেকে হাতজোড় করেছেন প্রার্থী। লাল-গেরুয়া-সবুজ সব দলের ক্যাডাররাই নাকি গাছ দখলে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। যা শুনে শিউরে উঠছেন পরিবেশবিদরা। এপ্রসঙ্গে পরিবেশবিদ নব দত্ত বলেন, “একবার ভাবুন তো কেউ আপনার গায়ে পেরেক ঠুকে দিচ্ছে। কেমন লাগবে? সাধারণ মানুষের সচেতনতা যতদিন না বাড়বে এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ করা অসম্ভব।” তবে শহর কলকাতায় নজর রাখছে পুরসভা। পুরসভার পক্ষ থেকে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “গাছে পেরেক পোঁতা কোনওরকমভাবে বরদাস্ত করা হবে না। কেউ রাজনৈতিক ফ্লেক্স অথবা ব্যানার লাগানোর জন্য গাছের ডালও কাটতে পারেন না। তাঁকে অবশ্যই পুরসভার অনুমতি নিতে হবে।”
শহরের রাস্তায় এমন ফ্লেক্স দেখলেই খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর শাস্তি? বনদপ্তর সূত্রে খবর, এমন কাজ চোখে পড়লেও অনেক সময়েই শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, কে কাজটি করেছেন তাকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তবে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই যে বা যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাকে শোকজ করা হবে।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, বহুদিন আগেই গাছে ফ্লেক্স আটকানোর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি মামলা করার পর এবিষয়ে আদালত রায় দেয়। গাছে কোনওভাবে পেরেক, পিন অর্থাৎ ধারালো কিছু লাগানো যাবে না।” কিন্তু তা সরেজমিনে দেখছে কে? পরিবেশবিদরা বলছেন, গাছে কাউকে ফ্লেক্স, ফেস্টুন পেরেক অথবা গজাল দিয়ে পুঁততে দেখলেই আটকান। অনুমতিপত্র দেখতে চান। নয়তো বনদপ্তর অথবা পুরসভাকে খবর দিন। শহরাঞ্চলে পুরসভার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে গ্রামের দিকে এই প্রবণতা বেশি বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। সেক্ষেত্রে ডিএফও অথবা জেলা বনদপ্তরের আধিকারিকদের অফিসে অভিযোগ জানানো যাবে। গাছের জন্য রয়েছে পুরসভার একটি হেল্প লাইন নম্বরও রয়েছে। সেটি হল- ২২৮৬ ১২১২। বনদপ্তরেরে হেল্পলাইন নম্বর ও রয়েছে। যদিও সাধারণের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময়েই ফোন পাওয়া যায় না সেই নম্বরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.