সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাম নামের আবেগ রুখতে এবার কৃষ্ণ নামই ভরসা তৃণমূলের। সূত্রধার জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ায় গেরুয়া শিবির ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির মধ্যে দিয়ে রাম নামের আবেগ জনতার মাঝে উসকে দিয়েছে। তারই পালটা এবার কৃষ্ণ নাম জপে জনতার মনের গহনে ডুব দিতে চায় তৃণমূল। “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে” শ্রী কৃষ্ণের এই জপমন্ত্র আউড়েই রামলীলার মতো কৃষ্ণলীলার আবেগও পুরুলিয়ার আমজনতার মনে জাগিয়ে দিতে চান শাসক-নেতৃত্ব।
২০২১-এর বিধানসভা ভোট বৈতরণী পার হওয়ার পথে তৃণমূলের অন্যতম চমক হতে চলেছে এই কৌশল। গলায় গেরুয়া উত্তরীয় ও মুখে ‘জয় শ্রীরাম‘ ধ্বনির পালটা হতে চলেছে গলায় তুলসীর মালা, কপালে চন্দনের রসকলি আর মুখে-মুখে ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ’ জপমন্ত্র। আর এই কৃষ্ণ-কথার আবেগ ছুঁয়ে পুরুলিয়ায় মানুষের মন জয় করে ভোট টানাই আপাতত কৌশল তৃণমূলের।
রবিবার রাতে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ইসকনের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে শ্রী কৃষ্ণের জপমন্ত্র আউড়ান। পরে ওই অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, “বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে রাজনীতির স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করছে। আর তা করতে গিয়ে এই ধ্বনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে উত্ত্যক্ত করতে চাইছে। সব মিলিয়ে রামের নাম বদনাম করছে। আমাদের স্লোগান ‘জয় হিন্দ‘। সেই সঙ্গে ‘হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ’ নাম নিয়েও আমরা মানুষের মাঝে যাব। কৃষ্ণ-কথাকে মানব মাঝে তুলে ধরব।” রঘুনাথপুরের ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, “শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, পৃথিবীতে একটাই জাতি মনুষ্যজাতি। আর ধর্ম একটাই, মানব ধর্ম। তাই ধর্মের নামে ভেদাভেদের রাজনীতিকে দূর করতে কৃষ্ণ কথাই বলতে চাই আমরা। জপতে চাই হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ।”
তথ্য বলছে, উন্নয়নের আবহেও শুধুমাত্র ‘জয় শ্রীরাম’ আবেগের দাপটেই তৃণমূল এবার তাদের ভোট ধরে রাখতে পারেনি। লোকসভা নির্বাচনে শাসকদলের রীতিমতো ভরাডুবি হয় এই জেলায়। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতেই পুরুলিয়া ভোটে গেরুয়াময়, যার রেশ এখনও চলছে। এই জেলায় ইদানিং কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ বা মোবাইলে আলাপচারিতার সূচনাতেও নমস্কার বা হ্যালোর বদলে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উঠছে। বিজেপি তথা গেরুয়া শিবির এই ধ্বনি আউড়েই জেলার যুবমন অনেকটাই জয় করেছে। তাই পুরুলিয়ায় এই ধ্বনিতেই রাজনীতির ময়দানে অশনি সংকেত দেখছে তৃণমূল। সেই কারণেই পুরুলিয়ায় এবার পালটা কৃষ্ণ নামের আশ্রয় নেওয়ার ভাবনা শাসকদলের। যার উদ্যোক্তা সভাধিপতি স্বয়ং। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের অলিখিত নির্দেশও দিয়ে দিয়েছেন, যেখানেই হরিনাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠান হবে সেই আখড়ায় গিয়ে জনসংযোগ করতে হবে। মানুষের মাঝে মিশে আউড়াতে হবে শ্রীকৃষ্ণ নাম।
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.