নব্যেন্দু হাজরা: করোনা (Coronavirus) আবহে উচ্চতা কমেছে মা দুগ্গার। বড় প্রতিমার বদলে এবার চাহিদা বেশি ছোট মূর্তিরই। কিন্তু সেই পথে হাঁটতে নারাজ চন্দননগর। জগৎখ্যাত ঐতিহ্যবাহী এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজো হবে আগের মতোই। উচ্চতা কমিয়ে যেমন খুশি জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মূর্তি বানানো যাবে না। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতি বছর পূজিত হওয়া স্থায়ী কাঠামোকে ব্রাত্য করে আলাদা প্রতিমা অর্থাৎ ছোট ঠাকুর নির্মাণের মাধ্যমে পুজো করা যাবে না। চন্দননগরের ঐতিহ্যের সঙ্গে তাল রেখে বারোয়ারির স্থায়ী কাঠামোয় মাতৃপ্রতিমা নির্মাণের মাধ্যমে পুজো করতে হবে। তবে স্বাভাবিক উচ্চতাসম্পন্ন পুজো আয়োজনে অনিচ্ছুক যাঁরা, তাঁরা স্থায়ী কাঠামোয় জগদ্ধাত্রী মাতার প্রতিচ্ছবি ফ্লেক্স স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিমাবিহীন ঘটপুজোর আয়োজন করতে পারবেন।
করোনা আবহে কলকাতায় পুজো কত বড় করে হবে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ছিল গোটা দেশ-বিদেশের মানুষের, তেমনই চন্দননগরের (Chandannagar) জগদ্ধাত্রী পুজো কত বড় করে হবে, বা আদৌ হবে কি না তা নিয়েও মানুষের আগ্রহ কম ছিল না। এর আগে কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি এ বিষয়ে সমস্ত বারোয়ারির কাছে মতামত চায়। সেখানে ১১৯টি পূজা কমিটি চিরাচরিত স্বাভাবিক উচ্চতাসম্পন্ন প্রতিমা নির্মাণের মাধ্যমে পুজো করার মত দেয় এবং ৩৩টি পুজো কমিটি ঘটপুজোর পক্ষে মতামত দেয়। তার ভিত্তিতেই এদিন বৈঠক হয়। সেখানে আড়ম্বরহীন পূজা অর্চনাদি আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রশাসনিক অনুমতি গ্রহণ করে সরকারি স্বাস্থ্যবিধিকে মান্যতা দিয়ে পরিবেশবান্ধব পুজোর উপর বিশেষ জোর দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি তিন দিক উন্মুক্ত বড় পরিমাপের আসর যুক্ত মণ্ডপ নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে পুজো কমিটিগুলোকে। একই সঙ্গে এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপ প্রতিদিন স্যানিটাইজেশন এর ব্যবস্থা এবং মাস্কবিহীন অবস্থায় পুজোমণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। মানুষ ও যানচলাচলের জন্য পথ উন্মুক্ত রেখে আলোকসজ্জা প্রদর্শন করা যেতে পারে বলে জানানো হয়। সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থে পুজো কমিটিগুলিকে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্মসূচি পালন করতেও বলা হয় কমিটির তরফে।
আর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০ সালের জয়ন্তী বর্ষ পালনকারী পুজো কমিটিগুলি, আগামী বছর ’২১ সালের জয়ন্তী বর্ষ পালনকারী পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে, তাদের জয়ন্তী বর্ষ পালনের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করার সুযোগ পাবেন যদি আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। আর বিশ্ববিখ্যাত প্রতিমা নিরঞ্জনের গাইডলাইন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সত্বর প্রকাশ করা হবে কমিটির তরফে জানিয়েছেন কর্তারা।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে মৃৎশিল্পী, সাজসজ্জা শিল্পী, আলোকশিল্পী, ডেকরেটার্স, সাউন্ড বক্স ব্যবসায়ী, ঢাকি, দশকর্মা ব্যবসায়ী, পুরোহিত, ফল-ফুল ব্যবসায়ী, লরি ও তার ড্রাইভার-খালাসি থেকে শুরু করে ছোট-বড় মেলা ব্যবসায়ী, ছোট পরিবহণ ব্যবসায়ী সকলেই যুক্ত। অতএব তাদের কাছে এই পুজো হওয়াটা বেশ আশাব্যঞ্জক। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, “চন্দননগরের ঐতিহ্যশালী জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja) তার রীতি মেনেই হবে। প্রতিমার স্বাভাবিক উচ্চতা মেনেই বানাতে হবে। উচ্চতা কমানো যাবে না। কোনও পুজো কমিটি তা না করতে চাইলে স্থায়ী কাঠামোয় ঘটপুজো করতে পারেন। কোভিড প্রোটোকল মানতে হবে পুজো কমিটিগুলোকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.