অর্ণব দাস, বারাকপুর: শুটআউটে যুবক খুন হওয়ার ঘটনার পর এখনও থমথমে জগদ্দলের পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে সিসিটিভি ফুটেজ। তাতেই দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন এই ঘটনা ঘটে তখন যথেষ্ট ভিড় ছিল এলাকায়।
জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম রিজওয়ান আলি। বয়স ২৬ বছর। জগদ্দল (Jagaddal) থানার ভাটপাড়ার রুস্তম গুমটির কাছে রাস্তার মোড়ে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সেখানেই রিজওয়ান আলি এবং আরও দু’জন সাদা পাঞ্জাবি পরে সেখানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন। তখনই পায়ে হেঁটে তিনজন দুষ্কৃতী সেখানে আসে। এরপর তারা সাদা পাঞ্জাবি পরা একজনকে ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু নিয়ে যেতে পারেনি।
এরপর একজন দুষ্কৃতী চায়ের দোকানের পিছনের রাস্তায় যেতেই রিজওয়ান এবং অন্যজন ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। হলুদ গেঞ্জি পড়া দু’জন দুষ্কৃতী তখন বড় মসজিদের কাছে রিজওয়ানকে ধরে ফেলে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এরপরই অন্য একজন দুষ্কৃতী পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করে খুন করে। প্রকাশ্যে খুন হওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই একপ্রস্থ বোমাবাজি হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একাধিক বাড়ি। জগদ্দল থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যায়।
শনিবার সকালেও পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত ছিল। দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। থমথমে এই পরিবেশে পুলিশের টহল ছিল ঠিকই, তবুও আতঙ্কে বহু মানুষ বাড়ি ছাড়েন। এদিন সকাল থেকে ভয়ে জগদ্দল বাজারও বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। কার্যত বনধের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। এ বিষয়ে বারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আশা করছি, নতুন করে আর কোনও ঝামেলা হবে না।”
যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ঘটনার পরপরই পুলিশ সক্রিয় হয়ে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামলে এত উত্তপ্ত পরিস্থিতি হত না। জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের পিছনে নিশ্চয়ই কারও মদত রয়েছে। নাহলে এই রকম ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসছে গণেশের নাম। তাকে বেশিরভাগ সময় পাপ্পু সিংয়ের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। এই পাপ্পু সিং নিজেকে বিজেপির নেতা বলেই দাবি করে। পুলিশ গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে। তদন্তের পরই গোটা বিষয় পরিষ্কার হবে।”
এ বিষয়ে বিজেপির বারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পাপ্পু অর্জুন সিংয়ের ঘনিষ্ঠ। অর্জুনবাবু এখন তৃণমূল করেন। পাপ্পু আমাদের দলের কেউ নন। এটা তৃণমূলের দলীয় কোন্দল।” যদিও এই প্রসঙ্গে বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, “দুই দুষ্কৃতীর মধ্যে গণ্ডগোল। শুক্রবার দুপুরে দু’জনের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর সন্ধ্যায় একপক্ষ গুলি চালায়। দু’জনই হেরোইনের নেশা করত। দু’জনের নামেই একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনার পর শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সকালে বোমাবাজি হয়েছে। বোমাবাজিতে একজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। পুলিশ গোটা ঘটনা তদন্ত করছে।”
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভাটপাড়ায় খুন হয়েছিলেন দুই যুবক। এরপর দু-দফায় উদ্ধার হয় ৮৫টি তাজা বোমা। বোমাবাজির অভিযোগও উঠেছিল এলাকায়। এরপর ফের শুক্রবার সন্ধ্যায় ভরা বাজারে খুনের ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.