বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: “ওখানকার লোকজন খুব কঠোর। ওদের লোকজন আমার ছেলেকে ছুটি দিতে চাইছিল না। আমার ছেলে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে চেয়েছিল। আমার ছেলেকে ছুটি দিলে হয়তো এই ঘটনা ঘটতো না।” কাঁদতে কাঁদতে এই কথাগুলো বলেছেন ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলার সেনা শিবিরে নিজের পাঁচ সহকর্মীকে খুন করে আত্মঘাতী ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশের জওয়ান মাসুদুল রহমানের মা হানিফা বিবি।
নাকাশিপাড়া থানা মারফত মাসুদুল রহমানের বাড়িতে দুঃসংবাদটি পৌঁছেছিল বুধবার দুপুরে। আর সেই খবর পৌঁছানোর পরেই নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার বিলকুমারী গ্রামের ওই আইটিবিপি জওয়ানের পরিজনদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। প্রকৃতই কী ঘটেছে, তা বুঝতেও বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। এই খবর শোনামাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন মাসুদুল রহমানের মা হানিফা বিবি। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, “১০ দিন আগেই আমার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ছেলে বলেছিল দু’মাস পর ছুটি নিয়ে বাড়ি আসবে। ও বলেছিল এটা একটা ভয়ংকর জায়গা মা। এখানে রাস্তায় বেরনো পর্যন্ত যায় না। আমি দু’মাস পর ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবো। এখানে অনেককেই দীর্ঘদিন ধরে ছুটি দেওয়া হয় না। কেউ পাঁচ বছর তো কেউ ছ’বছরেও ছুটি নিয়ে বাড়ি যেতে পারেনি। ও বলেছিল আমি ছুটির আবেদন করেছি। ওরা ছুটি দিচ্ছে না।” বুধবারেও ছেলেকে ফোন করেছিলেন মা হানিফা বিবি। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, “এদিন আমি ছেলেকে ফোনে পাইনি। ফোনটি ধরেছিল তারই এক সহকর্মী। সে বলেছিল, আমার ছেলে পাঁচটার সময় ডিউটি করে ফিরবে। তখনই তাকে ফোনে দেওয়া যাবে। তার আগেই এমন খবর পেলাম।” ছুটি না পেয়েই অবসাদ বা হতাশার জেরে যে এই ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হানিফা বিবি। ইতিমধ্যেই ছেলে মাসুদুলের বিয়ের কথাবার্তা প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন তাঁর বাবা-মা। মাসুদুলের বাবা মারফত আলি শেখ বলেন, “আমি ছেলেকে বলেছিলাম এবার বেশি করে ছুটি নিয়ে এসো। ও বলেছিল আমি ছুটির জন্য আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু ছুটি দিচ্ছে না। বলেছিলাম তোমার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। ও বলেছিল ছোট ভাই দেখলেই হবে। ছোট ভাইয়ের পছন্দ হলে আমারও হবে। মেয়ে পছন্দ হলেই আমি ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবো।”
গ্রামেরই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মাসুদুল। ২০০৮ সালে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশে যোগ দিয়েছিল মাসুদুল। সে ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলার বস্তারে কাজ করছিল। ভাল ছেলে হিসাবেই পরিচিত রয়েছে তার। সে যে এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে, তা এখনও পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছেন না মাসুদুলের প্রতিবেশীরাও।
ছবি: সঞ্জিত ঘোষ
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.