শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় অশান্তির জেরে গুলিতে নিহত দুই ছাত্রের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দিল রাজ্য সরকার। বিশেষ করে ঘটনার দিন পুলিশ গুলি চালায়নি বলে ইতিমধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে দাবি করেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কে বা কারা ঘটনার সময় ভিড়ের মধ্য থেকে গুলি চালাল? শুধু তা-ই নয়, ছাত্রদের নাম করে স্কুলের ক্লাসরুম, লাইব্রেরি থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বসার ঘর ও ল্যাবরেটরি পর্যন্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল কারা? কারণ স্কুলের ছাত্ররা ইতিমধ্যে প্রকাশ্যেই দাবি করেছে, তারা যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে সেখানে কিছুতেই হামলা চালাতে পারে না। শাসকদলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে বিজেপির তরফে হামলা চালানো হয়েছে দাড়িভিট স্কুলে। বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বস্তুত এই কারণে জেলা পুলিশের হাত থেকে দুই ছাত্রের গুলিতে মৃত্যু ও হামলা নিয়ে যাবতীয় তদন্তের দায়িত্ব রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির হাতে তুলে দিয়েছে।
[বনধের মধ্যেই স্কুলে ঢুকে ছাত্রকে মার বিজেপির সমর্থকদের]
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই দিন স্কুলে কে বা কারা এসেছিল এবং কেন এসেছিল তা জানতে সমস্ত বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্ধের নামে মুখে কাপড় বেঁধে এসে ইসলামপুরে কারা সরকারি বাস পুড়িয়েছে তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আইজি (উত্তরবঙ্গ) আনন্দ কুমার জানিয়েছেন, পুলিশের হাত থেকে ইতিমধ্যে সিআইডিকে তদন্তভার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার সিআইডির দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত শুরু করবে৷ ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি তদন্তভার নিতে চললেও খুশি নন মৃতের পরিবার৷ সিবিআই তদন্তে এখনও অটল দুই পরিবার৷ মৃত দুই ছাত্রের পরিবার সূত্রে খবর, ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে আগামী সপ্তাহে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হতে চলেছে৷
[প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের ভাইকে লক্ষ্য করে গুলি, চাঞ্চল্য চোপড়ায়]
অন্যদিকে, দাড়িভিট স্কুল খোলা নিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷ উদ্বিগ্ন পড়ুয়া থেকে অভিভাবক মহল৷ ঘটনার পর থেকে স্কুলে আসেননি শিক্ষকরা৷ এখনও দগদগে তাণ্ডবের ঘটনা৷ স্কুলের গেট খোলা। দরজা হাট করে খোলা ক্লাসরুমে৷ স্কুলের টেবিল, চেয়ার, হাজিরাখাতা পোড়া৷ ক্লাসরুমের মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নথি৷ একরাশ পোড়া পাঠ্যবই স্কুলের বারান্দায় পড়ে আছে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে৷ মাঠে ইতস্তত গরু চড়ছে। ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা প্রধানশিক্ষক অভিজিত কুণ্ডু৷ পরিচালন কমিটির সভাপতি নিশিচন্দ্র গণেশের খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল হুদাও নিখোঁজ৷ অন্যদিকে, পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে গুলিতে জখম প্রাক্তন ছাত্র রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণ ইসলামপুর কলেজে ভরতি রয়েছে। দশম শ্রেণির ছাত্র বিপ্লব সরকার পায়ে গুলি লাগায় তাঁকে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.