শ্রীষিতা ঘোষ: পড়ুয়া ধরে রাখতে হুবহু সিবিএসই বোর্ডের আদলে একাদশ দ্বাদশের বিজ্ঞানের সিলেবাস চালু করল আইসিএসই বোর্ড৷ চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই আইএসসিতে নয়া সিলেবাসে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে৷ ২০১৮ সালে পরীক্ষার্থীরা নয়া সিলেবাসে আইএসসি অর্থাৎ দ্বাদশের পরীক্ষায় বসবে৷ মঙ্গলবার কোলাঘাটে কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজামিনেশনস-এর বার্ষিক সাধারণ সম্মেলনে অংশ নিয়ে একথা ঘোষণা করেন কাউন্সিলের সিইও জেরি অ্যারাথুন৷
কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত? জেরি অ্যারাথুন জানান, আইআইটি-জয়েণ্ট এণ্ট্রান্স মেন, অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা পরীক্ষা দায়িত্বে থাকে সর্বভারতীয় সিবিএসই বোর্ড৷ অভিভাবকদের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে সিবিএসই বোর্ডে ছেলেমেয়েকে পড়ালেই তারা ওই পরীক্ষায় ভাল ফল করতে পারবে৷ বহু ছাত্র-ছাত্রীই তাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় আইসিএসই থেকে সিবিএসই বোর্ডে চলে যায়৷ অথচ দু’টি বোর্ডেই কাউন্সিল অফ বোর্ড অফ স্কুল এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া (কবসে)-র সুপারিশ অনুযায়ীই সিলেবাস পড়ানো হয়৷ সে জন্যই সিবিএসই বোর্ডে চলে যাওয়া আটকাতে আইএসসির অঙ্ক, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও জীববিদ্যার সিলেবাসে বদল আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সিবিএসই বোর্ডের ধাঁচে হুবহু এক রাখা হয়েছে অধ্যায়ের বিন্যাসও৷ এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আইসিএসই অধীনস্থ স্কুলগুলিতে একাদশ-দ্বাদশে পড়ার প্রবণতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে৷ পরীক্ষাও হবে নয়া ধাঁচের প্রশ্নপত্রে৷ ইতিমধ্যেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ চলছে৷ দায়িত্ব রয়েছে কবসের উপর৷ এর পর দ্বাদশ শ্রেণির জন্যও নমুনা প্রশ্নপত্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক৷ ২০১৮ সাল থেকে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং প্রকাশিত বই ও বিভিন্ন রেফারেন্স বই পড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে বিভিন্ন স্কুলকে৷ এই ধরনের বইগুলি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে৷ বিজ্ঞানের সিলেবাসের পাশাপাশি কলা বিভাগের মধ্যে ইংরেজির সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷
পঠনপাঠনের সূচনাপর্ব থেকেই কচিকাঁচাদের শিক্ষার ভিত মজবুত করতে যুগোপযোগী, বিজ্ঞানসম্মত অভিন্ন সিলেবাস চালু করতে চলেছে আইসিএসই বোর্ড৷ আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নয়া সিলেবাসে পঠনপাঠন শুরু হবে৷ আইসিএসই বোর্ডের অধীন সমস্ত স্কুলে ওই সিলেবাস পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে৷ জেরি অ্যারাথুন জানান, এই সিলেবাসের ধরন অনেকটাই সর্বভারতীয় বোর্ডের পঠনপাঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হবে৷ এমন সিলেবাসে আগাগোড়া পড়াশোনা করার সুবাদে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবে৷
এছাড়াও বিভিন্ন্ সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে বসার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও এদিন জানান তিনি৷ তাঁর কথায়, “আমরা চাই না পড়ুয়ারা সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে কোচিং সেণ্টারে যাক৷ স্কুলের পড়ার পাশাপাশি তাই বোর্ডের পক্ষ থেকে ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ প্রস্তুত করা হচ্ছে স্টাডি মেটিরিয়াল, প্রশ্নপত্র৷ ভিডিও মারফত ক্লাস নেওয়ার পরিকাঠামোও তৈরি হচেছ৷ এদিকে আইআইটি-জয়েণ্ট এণ্ট্রান্স মেন, অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা দায়িত্বে সিবিএসই বোর্ডের থাকাটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মনে করছে কাউন্সিল৷ তাদের মতে, তাই সিবিএসই বোর্ডের বদলে যদি কোনও পৃথক নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তা পক্ষপাতদুষ্ট হবে না৷ এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন্ শিক্ষক সংগঠন আবেদনও জানিয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.