সরোজ দরবার: শুধুই সৌজন্য নাকি প্রছন্ন রাজনৈতিক বার্তা? মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয়বার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজনীতিকদের চাঁদের হাট বিভিন্ন মহলে উসকে দিয়েছে এ জল্পনাই। শপথ অনুষ্ঠানের ছবিটি যে নজিরবিহীন, সন্দেহ নেই। শপথবাক্য পাঠ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সামনে থেকে সেই মুহূর্তের সাক্ষী নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যে রাজ্যে সরকারের শপথ গ্রহণে গরহাজির বিরোধী বিধায়করা, সেই আবহে নিঃসন্দেহে এ এক রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবি। সেইসঙ্গে নেপথ্যের বার্তাটিও উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল।
বিপুল জনাদেশে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা-নারদা ইস্যুর চাপ থাকা সত্ত্বেও স্থানিক উন্নয়নের ভিত্তিতে এই জয় বিশেষজ্ঞদের নতুন করে ভাবিয়েছে। বাম-কংগ্রেসের প্রস্তাবিত জোটকে রাজ্যের মানুষ প্রত্যাখান তো করেইছে, একই সঙ্গে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন হলেও বিজেপিও হালে পানি পায়নি। শতাংশের হিসেবে বিজেপির ভোট বাড়লেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখনও যে বিজেপি হীনবল, তা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি অরুণ জেটলিও। মমতার এই জয় তাই রাজ্য রাজনীতিতে যেমন নানাদিক থেকে তাপর্যপূর্ণ, তেমনই প্রাসঙ্গিক জাতীয় রাজনীতিতেও।
প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর গোড়ার দিকে মোদি-মমতা বেশ কিছুদিন মুখোমুখি হননি। তা নিয়ে নানা জল্পনা দানা বেঁধেছিল। পরে অবশ্য সে জট কাটে। একই সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে তাঁর দেখা করা নিয়ে বেশ জল্পনা চলেছিল রাজনৈতিক মহলে। এরই মধ্যে বিহারে অমিত শাহর স্ট্র্যাটেজিকে ধরাশায়ী করে ক্ষমতায় এসেছে লালু-নীতিশ জোট। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও কেরলেও বিজেপির বিরুদ্ধেই সায় দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে বিজেপির পাখির চোখ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। কিন্তু তার মধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে জোটশক্তির তৃতীয় মোর্চা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যেন সে ছবিটিকেই আরও স্পষ্ট করছে। বিজেপির তরফে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ লালু-নীতীশ-কেজরির উপস্থিতি। ভবিষ্যতে এই তিন শক্তি মিলিত হলে জাতীয় রাজনীতির ভরকেন্দ্রটি যে বদলে যেতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ইতিমধ্যেই মমতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জয়ললিতা। কেন্দ্র সরকারকে প্রশাসনিক নানা সিদ্ধান্তের জন্য এই স্থানীয় দলগুলির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে তা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী জোটের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন আরও শক্ত করল এই অনুষ্ঠান বলেই মনে করছে অভিজ্ঞমহল। এদিন সে ইঙ্গিত দিয়েও রাখলেন জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। মমতাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বলে গেলেন, এই শক্তির উত্থানের সমস্ত সম্ভাবনা আছে। একই কথা বললেন লালুপ্রসাদ যাদবও। বিজেপিকে দিল্লির সিংহাসন থেকে সরাতে মমতার জয় তথা এ শক্তির সম্ভাবনাকে কার্যত মান্যতা দিয়ে গেলেন নীতীশ কুমারও।
ফলাফল ঘোষণার দিনই মমতা জানিয়েছিলেন, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের মতাদর্শগত ফারাক রয়েছে। তবে বিজেপিকে ইস্যুভিত্তিক সমর্থনের পথে ভবিষ্যতে জেতে পারে তৃণমূল। এদিকে গুরুত্বপূর্ণভাবে মমতাকে এদিন অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীও। বিজেপি বিরোধী প্ল্যাটফর্মের ছবিটি যে বেশ স্পষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল অন্দরের খবর, এই বিপুল জয়ের পর মমতার চোখ দিল্লির দিকেই। উন্নয়নের প্রশ্নে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি এই মুহূর্তে বেশ কোণঠাসাও। যে প্রতিশ্রুতির রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদি, তা এখন অনেকটাই ফিকে। দেশজুড়ে খরা, জল সংকট মোকাবিলা নিয়েও সমালোচনায় বিজেপি সরকার। এহেন পরিস্থিতিতেই এই তৃতীয় শক্তির উত্থান আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কি তারই নান্দীমুখ হয়ে থাকল. রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থনের ভিত্তিতেই পুরো ছবিটা পরিষ্কার হবে। তবে এই অনুষ্ঠান যে তৃতীয় ফ্রন্টের বীজবপনের ভূমি হয়ে থাকল এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
ছবি- অরিজিৎ সাহা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.