পরিবার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে, তাই হাসপাতাল থেকে ফিরেও দেখা হল না।
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: করোনা আক্রান্ত হওয়া কি অভিশাপের? মারণ রোগের সঙ্গে যুঝে ফিরে আসার পর সখেদে এরকমই প্রশ্ন তুললেন হুগলির করোনাজয়ী। যুদ্ধ জয় করে ঘরে ফিরেও জুটল না স্বজনদের সান্নিধ্য, ন্যূনতম আদর-যত্ন। কারণ, গোটা পরিবারই যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। ঘরে যে তালাবন্ধ! এত কঠিন একটা সময় পেরিয়ে এসে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এই করোনার অভিশাপ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ওই ব্যক্তি।
হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি পেশায় সবজি বিক্রেতা। গত ১৯ এপ্রিল প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। তাঁকে প্রাথমিক ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বারবার ভরতি হতে চাইলেও, প্রত্যাখ্যান করে হাসপাতাল। ততদিনে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। উপসর্গ দেখে পরে হাসপাতালে ভরতি নিয়ে সোয়াব টেস্ট করানো হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপরই তাঁর চিকিৎসার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কলকাতার COVID হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। পরিবারকে শ্রীরামপুরের কোয়ারেন্টাইনে সেন্টারে রাখা হয়। বেশ কয়েকদিন চিকিৎসার পর সোমবারই তিনি ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে।
কিন্তু ছাড়া পেয়েও শান্তি নেই। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁকে নিজের বাড়ি থেকে বহু দূরে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে ছিলেন না কোনও প্রশাসনিক ব্যক্তি। কোনওমতে দুর্বল শরীরে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে বাড়ি পৌঁছন। কিন্তু ঘরে তালা দেওয়া। কারণ, তার গোটা পরিবারই কোয়ারেন্টাইনে। তাঁদের কাছেই ঘরের চাবি ছিল। তালা খুলতে না পারলে কীভাবে ঘরে ফিরবেন? পরে প্রতিবেশীদের সাহায্যে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পর তাঁর খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। শুধু মুড়ি-জল খেয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েই ওই ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া কি অভিশাপ? নাহলে তাঁর এই আচরণ কেনই বা প্রাপ্য?
অনেক জায়গাতেই দেখা গিয়েছে, করোনা সংক্রমণ সেরে সুস্থ হয়ে ফেরা ব্যক্তিদের সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধজয়ীদের মতো আপ্যায়ণ করা হচ্ছে। পু্ষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে তাঁদের বিদায় দেওয়া হচ্ছে। স্বাগত জানাতে হাজির থাকছেন স্বয়ং জেলা কিংবা ব্লকের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। কিন্তু হুগলির এই যোদ্ধার ক্ষেত্রে একেবারেই উলটপুরাণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.