Advertisement
Advertisement

Breaking News

কুলতলির ইতিহাস

জমি দখল বা ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা, ইতিহাসে লেখা রক্তাক্ত কুলতলির কাহিনি

বাম আমল থেকে বর্তমান সময়, সংঘর্ষ এখানে সাধারণ ঘটনা।

Investigation unearths startling facts about Kultoli violence
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 6, 2020 7:36 pm
  • Updated:July 6, 2020 7:36 pm  

দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলেছে। পালটেছে শাসক-বিরোধী দল। কিন্তু কুলতলি থেকে গেছে কুলতলিতেই। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, কুলতলির ইতিহাস রক্তের ইতিহাস। কুলতলির নোনা মাটি বরাবর ভিজেছে রাজনীতির রক্তে। শাসক যিনিই থাকুন, হিংসা, হানাহানির ছবিটা বদলায়নি। যেমনটা শুক্রবার রাতে ঘটে গেল কুলতলিতে। এ কোনও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও কুলতলিতে এরকম ঘটনা বহু ঘটেছে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, খুন – সবাই হয় নিয়ম মেনে।

কুলতলির রক্তে ভেজা ইতিহাসের পাতায় একবার চোখ রাখা যাক। সালটা ১৯৮৯, তারিখ ৯ ডিসেম্বর। ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কুলতলিতে খুন হলেন ন’জন। সিপিএমের জগদীশ মণ্ডল,  চিত্তরঞ্জন দাস, হরিপদ জানারা খুন হলেন এসইউসিআইয়ের হাতে। পালটা খুনোখুনি শুরু করল তৎকালীন শাসকদল সিপিএমও। ৬ জনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হলো। বাদ যায়নি ছোট্ট শিশুও। সেদিনই খুন হয় এসইউ‌সিআই‌ নেতা সুখময় পুরকায়েত, দিলীপ গিরি, পালান হালদার, আয়নাল শেখ, সুশীল মাইতি ও উত্তম মুন্ডা। জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এঁদের দেহ। কারণ, খুন করে গুম করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সিপিএমের। সেই খুনোখুনি সংঘটিত হয়েছিল দুই বামপন্থী দলের মধ্যে।

Advertisement

পরে ১৯৯৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ফের কুলতলিতে খুন হন তিনজন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের ভানু শেখ ও এসইউসিআইএর ভক্তি জানা, আরতি জানা। এছাড়া মাঝেমধ্যেই ঘটেছে খুনের ঘটনা। শুধু তাই নয় পুলিশ এনকাউন্টারে কয়েকদিন আগেও মারা গিয়েছে বেশ কিছু দুষ্কৃতী। এরপর নতুন করে রাজনীতির রক্তে রাঙা হলো মইপিঠ।

আসলে জয়নগর, কুলতলির পুরোটাই দখলে ছিল এসইউসিআইয়ের হাতে। সেই সময় রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার তখন ক্ষমতার মধ্যগগনে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশমতো তখন কুলতলিতে অপারেশন শুরু করে সিপিএম। নেতৃত্ব দেওয়া হয় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে। আস্তে আস্তে সিপিএম প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে জয়নগর ও কুলতলি এলাকায়। বেশ কিছু পঞ্চায়েতও দখল করে বামফ্রন্ট। কিন্তু ক্যাডার বেসড রাজনৈতিক দল এসইউসিআই নিজেদের প্রভাব বজায় রাখে অধিকাংশ পঞ্চায়েত, দুটি বিধানসভাতেও।

শুধু রাজনৈতিক কারণ নয়, খুনের পিছনে ছিল খাস জমি দখল। মনি নদীর দখল কার থাকবে, কে সেখানে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করবে – তা নিয়ে এসইউসিআই এবং সিপিএম এর মধ্যে প্রায়শই দ্বন্দ্ব লেগে থাকত। আর তার জেরেই বাড়ত খুনের ঘটনা। পরিবর্তনের সরকারে তাই সিপিএম কে সরাতে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলায় এসইউসিআই। সাংসদ হিসাবে জয়নগর থেকে যেতেন তরুণ মণ্ডল।

তারপর যথারীতি কালের নিয়মে ভাঙন হয় এসইউসিআই ও তৃণমূল জোটের। জয়নগর, কুলতলি আপাতত দুটি বিধানসভায় হাতছাড়া হয়ে গেছে এসইউসিআইয়ের। তবে বেশ কিছু এলাকাতে এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী এই দল। শুধু গ্রাম এলাকায় নয়, শহর এলাকাতেও যথেষ্ট প্রভাব ছিল দলের। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে জয়নগর পুরসভাও চালিয়েছে তারা। দক্ষিণ বারাসাত কলেজে মূলত ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ডিএসও গন্ডগোল হত ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করেই। যত ক্ষমতা হারাতে শুরু করেছে এসইউসিআই, তত ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছে শাসকদল। আর তার থেকেই শুরু হয়েছে একের পর এক গন্ডগোল।

[আরও পড়ুন: গ্রামবাংলার ২ কোটি পরিবার পাবে পরিশ্রুত পানীয় জল, ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]

এ বিষয়ে কুলতলির সিপিএম বিধায়ক রাম শংকর হালদার বলেন, “মূলত খুনের পেছনে থাকে এলাকা দখলের রাজনীতি।তবে আমরা এসইউসিআইয়ের সঙ্গে লড়াই করেছিলাম এলাকায় শান্তির জন্য। আমাদের কর্মীকে গাছে বেঁধে খুন করে দেওয়ার পর এলাকা পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তিনি খুনের কথা বলেননি। আমরা যা করেছি, এলাকায় শান্তির জন্য করেছি। আমাদের স্লোগান ছিল – শান্তি চাই।”

সিপিএমের কথা মানতেই রাজি নন এসইউসিআই। কুলতলির প্রাক্তন বিধায়ক জয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, “এই লড়াই কংগ্রেস আমল থেকে। এখন যারা মানুষ খুন করছে, তারা তখনও করেছিল। এরা সব বড়লোকদের দলে ছিল। আর বড়লোকদের জন্যই তারা খুন করেছে গরিব মানুষদের। আমরা সবসময় গরিব মানুষদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান খুনের পেছনে আছে দুর্নীতি।”

[আরও পড়ুন: ‘চ্যানেলগুলো আমাদের পারিশ্রমিকটাও ভাবুক’, মমতাকে আরজি আর্টিস্ট ফোরামের]

ইতিমধ্যেই সিপিএম থেকে বহু মানুষ নাম লিখিয়েছে তৃণমূলে। খুন হওয়া তৃণমূল কর্মী অশ্বিনী মান্না এলাকায় কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। সিপিএম তার ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারলেও এসইউসিআই এলাকায় তার নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে কিছুটা হলেও সক্ষম। এ বিষয়ে তৃণমূলের এলাকার যুব সভাপতি গণেশ মণ্ডল বলেন,”সিপিএমের সময় সিপিএম খুন করেছে, এসইউসিআই খুন করেছে। এখন তৃণমূলের লোকদেরকে ওরা উভয় মিলে খুন করছে। খুন করে কখনও শান্তি আসতে পারে না।”

খুনের পেছনে থাকে রাজনৈতিক জমি দখলের চেষ্টা। যেমনটা সর্বশেষ হল মইপিঠের ঘটনা। কারণ, মইপিঠে বর্তমানে তৃণমূল ক্ষমতাশালী হলেও পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। আর তৃণমূল থেকে এসেছে দিকে পাল্লা ভারী হতেই শুরু হয়েছে গন্ডগোল। সব মিলিয়ে এই লড়াই একদিনের নয়। পাওয়ার পয়েন্ট যতই বদল হোক, পরিচয় পাল্টাক শাসক-বিরোধীর, রক্তাক্ত ইতিহাস কিন্তু ফিরে ফিরে আসে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement