রিন্টু ব্রহ্ম, বর্ধমান: র্যাগিংয়ের অভিযোগের কোনও সারবত্তাই নেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের রিপোর্ট তেমনটাই। অভিযোগকারী মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলেও অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। এই রিপোর্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে পাঠাচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড নিজেদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী স্নাতকোত্তরের উইমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র শেখ সুজাউদ্দিন। গত ২৬ অক্টোবর তিনি প্রথম ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছিলেন বর্ধমান থানায়। একইসঙ্গে অ্যান্টি র্যাগিং হেল্পলাইনেও (ইউজিসি-র) অভিযোগ জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র হস্টেলের ওই ছাত্র হস্টেল সুপার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাউকেই কিছু জানাননি। ওই ছাত্রর অভিযোগ, তাঁকে হস্টেলে লাগাতার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকী হস্টেল থেকে বের করেও দেওয়া হয় মাঝরাতে। বহিরাগতরা হস্টেলে থাকে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বর্ধমান থানার পুলিশের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি জানানোর পরেই উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত স্কোয়াড হস্টেলে যায়। আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে। রিপোর্টে উল্লেখ, আবাসিকরা প্রায় সকলেই জানিয়ে দেয়, ওই ধরণের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। পাশাপাশি, আবাসিকরা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও জানিয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় তথা হস্টেলের বদনাম করা হচ্ছে। অভিযোগকারীর সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রে প্রাক্তন এক ছাত্রও জড়িত বলে হস্টেলের আবাসিকরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান।
এরপর অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারী। তাঁদের সামনে সুজাউদ্দিন নিজের আনা অভিযোগে অনড় থাকলেও, কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর। পাশাপাশি, ৩১ অক্টোবর ওই ছাত্র হস্টেলে ঢুকতে গেলে তাঁকে আটকে রাখা ও হেনস্তা করা হয় বলেও পুলিশে ও ইউজিসি-র কাছে যে নালিশ তিনি জানিয়েছিলেন, তারও তদন্ত করেছে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড। কিন্তু কোনও অভিযোগেরই সারবত্তা নেই বলেই রিপোর্ট দিয়েছে স্কোয়াড। সেদিন, বাইরের ছাত্রদের দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। কিন্তু যে অভিযোগ করা হয়েছে, তেমন কিছু ঘটেনি বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর নেতৃত্বে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন পুলিশের ডিএসপি (ডিআইবি) বীরেন্দ্রকুমার পাঠক, জেলাশাসকের প্রতিনিধি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-সহ অন্যান্য সদস্যরা। রেজিস্ট্রার তাফাজল হোসেন জানান, রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কমিটিরও বৈঠক ছিল। তার আগে রবীন্দ্র হস্টেলের আবাসিকরা বিক্ষোভ দেখান। পরে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, র্যাগিংয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। যাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজিও জানিয়েছেন আবাসিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.