একবিংশ শতকেও লিঙ্গ বৈষম্য ঘুচল না। কন্যাসন্তানের জন্ম অনেকের কাছে অপরাধের মতো। এভাবে এসে গেল আরও একটা নারী দিবস। সমাজে নারী-পুরুষের তফাতের মধ্যে নিজেদের মতো করে মাথা উঁচু করে এগোনোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। বাংলার নানা প্রান্তে রয়েছে এমন অজস্র সম্ভাবনা। সেই অর্ধেক আকাশের খোঁজে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। এই সব আং সাং হিরোইনদের নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন ‘তোমারে সেলাম’। আমাদের প্রতিনিধি ঝাড়গ্রামের সুনীপা চক্রবর্তী, এক যোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করালেন।
হাতে হাতুড়ি তুলে নিয়েছেন। তপ্ত গরমে গনগনে আগুনের আঁচের সামনে বসে এক মনে লোহা পিটিয়ে চলেছেন। শীত-গ্রীষ্ম বারো মাস এই লোহার তালকে আগুনে নরম করে হাতুড়িপেটা করে নির্দিষ্ট রূপ দিয়ে চলেছেন। পঙ্গু, অসমর্থ স্বামীকে নিয়ে দারিদ্রের সংসারে একা এক মহিলা এইভাবে এক অসম লড়াই চালাচ্ছেন। নারী দিবস বলে আলাদা কিছু নেই তাঁর কাছে। নারী দিবসে তাঁকে নিয়ে লেখালেখি হবে, ছবি উঠবে এসব ভাবনার সময়ই বা কই তাঁর। হাপর টানা বন্ধ হলে যে সংসারে হাঁফ ধরবে। কণ্ঠ জোরে ছাড়তে পারেন না ঠিকই, কিন্তু হালও ছাড়েননি। তাই শারীরিক পরিশ্রমের যে কাজ পুরুষদের হওয়া উচিত, তা তিনি আবলীলায় করে চলেছেন। সরকারি কোনও সাহায্যের আশায় বসে থাকেননি। কেবলমাত্র দু’টাকা কেজি চাল ছাড়া অন্য কোনও সাহায্য পানওনি।
[খবরের ফেরিওয়ালা, সংসারের ছাতা হয়ে একাই ছুটে চলেন ফুলেশ্বরী]
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র কয়েক কিমি। শাপধরা অঞ্চলের ধরমপুর গ্রামের প্রমীলা রানা। গ্রামে মঙ্গলা নামেই পরিচিত। টাকার অভাবে মঙ্গলার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়েছে। আর স্বামী গোপাল রানা রোগে ভুগে পাঁচ বছর আগে হাঁটাচলার ক্ষমতা হরিয়েছেন। তারপর থেকে মঙ্গলা বাড়িতে নিজেদের ছোট্ট কামারশালার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়েই লোহা পিটিয়ে তৈরি করছেন সাঁড়িশি, কুড়াল, কাটারি, বটি, কাস্তে থেকে শুরু করে যে কোনও ধরনের লোহার সামগ্রী। মঙ্গলার বড় ছেলে বয়সে কিশোর তাপস বলেন, “মা সকাল থেকে বিকেল অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। চাল ছাড়া আমরা কোনও সরকারি সাহায্যও পাইনি।” মঙ্গলা দেবী হাপর টানা বন্ধ করে শাড়ির খুঁটে মুখ মুছতে মুছতে বলেন, “সরকার থেকে যদি একটা ঘর পেতাম তাহলে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা হয়। প্রতি বছর খড়ের চালা নষ্ট হয়ে যায়। জল পড়ে। আমাদের জমি জায়গাও তো নেই। প্রশাসনের দোরে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি। পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে বড় কষ্টে আছি।”
মঙ্গলাদেবী কীভাবে এই কঠিন কাজ শিখলেন? প্রচন্ড গায়ের জোর প্রয়োজন তো! দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি শুধু বলেন, সবই কপাল। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিডিও সুদর্শন চৌধুরী বলেন “উনি আবেদন করুন, তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব।”
ছবি: প্রতিবেদক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.