চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: আশ্বিন নয়, ভাদ্রমাসেই অকাল দুর্গাপুজো উদযাপনে মাতেন বাসিন্দারা। দুর্গাপুজো নয়, মনসাপুজো। তবে উমার আরাধনাকেও হার মানাবে তার জাঁকজমক। ঘটনাস্থল আসানসোলের হীরাপুরের বড়দিঘারী গ্রাম। এই গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো হয় না। তাই সব আনন্দের মধ্যমণি মা মনসা। তাকে ঘিরেই উৎসবে মাতেন বাসিন্দারা। দুর্গোৎসবের ধাঁচে মা মনসার পুজো হয় এখানে।
প্রতিমাতেও রয়েছে স্বকীয়তার ছাপ। একটি বছর পরে চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা বাপের বাড়িতে আসেন। মহিষাসুরের সঙ্গে মা দুর্গার পরিবার মিলিয়ে থাকে মোট ছ’জন। অন্যদিকে বড়দিঘারীর মা মনসার সঙ্গে থাকেন স্বামী ঋষি জরৎকারু (জগৎকারু), পাশে থাকে লক্ষ্মী-সরস্বতী, বেহুলা-লখিন্দর, চাঁদ সদাগর ও সনকা। এই রূপ মূর্তি অন্যত্র দেখা যায় না বলে গ্রামবাসীর দাবি। মনসা কোথাও তিনি নাগরাজ বাসুকির বোন এবং ঋষি জগৎকারুর স্ত্রী। আবার কোথাও তাঁর পিতা শিব। কোথাও তিনি কাশ্যপ ঋষির কন্যা। মনসার অনেক রকম মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। সর্বাঙ্গে সাপ‚ মাথায় কাল কেউটের সাতটি ফণা থাকলেও তাঁর বাহন কিন্তু রাজহংস। কোথাও মা মনসার কোলে দেখা যায় পুত্র আস্তিককে। অনেক জায়গায় তাঁর সঙ্গে পুজো পেয়ে থাকেন সহচরী ও মন্ত্রণাদাত্রী নেত্য ধোপানিও। কিন্তু লক্ষ্মী সরস্বতীর মূর্তি-সহ মনসার পুজো একমাত্র দেখতে পাওয়া যায় এই গ্রামেই। মূর্তির এরকম রূপ কেন তা বলতে পারেননি গ্রামের প্রবীণরাও।
স্থানীয় গৃহবধূ সন্ধ্যা বাউরি বলেন, দুর্গাপুজো তাঁদের গ্রামে হয় না। কিন্তু মনসা পুজোই তাঁদের কাছে দুর্গাপুজোর সমতুল্য। পুজোর জন্য গোটাগ্রাম অরন্ধন থাকে। পরদিন উপোস করেই পুজো দিতে যান সকলে। ভাদ্র সংক্রান্তি থেকে পরের চারদিন নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ। আটচালা প্রতিমায় আটটি মূর্তি, বাড়ি বাড়ি ভোগ বিতরণ, চারদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজো ভেবে ভুল হতেই পারে। দুর্গাপুজোর ধাঁচেই বড়দিঘারী গ্রামে সাড়ম্বরে পালিত হয় মনসা পুজো। এখানে অন্য কোনও বড় পুজো হয় না। এমনকী, দুর্গাপুজোও হয় না এখানে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.