সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তৃণমূলের ঠিকা সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে বিবাদ চলছিলই৷ এবার তা সংঘর্ষের আকার নিল৷ চলল বোমাবাজি৷ সংঘর্ষে আহত পাঁচ তৃণমূল কর্মী। দিনেদুপুরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি করে বেরালো দুষ্কৃতীরা৷ আতঙ্কের পরিবেশ দুর্গাপুরের আমরাই গ্রামে। নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকায় মোতায়েন পুলিশ।
ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিবাদ চরমে ওঠে দিন পাঁচেক আগে। সেদিন আইএনটিইউসি জেলা সভাপতি তথা কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালের অনুগামীরা ঠিকা কর্মীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে ডিএসপি কারখানার গেটে অবস্থান করেন। আবার আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের অভিযোগ, গত দু’দিন ধরে কারখানায় ঢুকতে গেলেই ঠিকা কর্মীদের গেট পাস ছিনিয়ে নিচ্ছে বিশ্বনাথ পারিয়ালের দলবল। সূত্রের খবর, প্রাক্তন সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে সংগঠনের কোনও পদে না থাকলেও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ঠিকা শ্রমিক সংগঠন বকলমে এখনও তিনিও নিয়ন্ত্রণ করেন। আর জেলা সভাপতি হয়েও তৃণমূলের এই ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নিতে ব্যর্থ বিশ্বনাথ পারিয়াল। তাই নানা উপায়ে সেই ক্ষমতা দখলে মত্ত কংগ্রেস বিধায়ক ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের মধ্যেই বিভাজনের রাজনীতি করতে সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ প্রভাত অনুগামীদের।
শুক্রবার এই দু’পক্ষের বিবাদের রেশ গিয়ে পড়ে দুর্গাপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আমরাই গ্রামে। কারণ, এই গ্রামেই বাস ডিএসপি ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের মূল দায়িত্বে থাকা প্রভাতবাবুর অনুগামী শেখ সাহাবুদ্দিন, শেখ আতাহার, শেখ আজিমুদ্দিননের। আবার কংগ্রেস বিধায়ক ও আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পারিয়ালের অনুগামী আমিনুর রহমানের বাড়িও এই আমরাই গ্রামেই। তাই গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল৷ তা প্রশমনে মাঝেমধ্যে পুলিশও ছুটে গেছে আমরাই গ্রামে।
শুক্রবার সকালে ফের উত্তেজনা ছড়ায় এখানে। প্রভাতবাবুর অনুগামী বলে পরিচিতরা কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালের অনুগামীদের তাড়া করে বলে অভিযোগ৷ এলাকায় যথেচ্ছ বোমাবাজিও হয় দুই পক্ষের মধ্যে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে, আগ্নেয়াস্ত্র-সহ বহিরাগতদের দাপাদাপির ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
বিশ্বনাথ পারিয়ালের অনুগামী আমিনুর রহমানের কথায়, ‘ঠিকা মজদুর ইউনিয়নের বিভিন্ন দাবি নিয়ে ডিএসপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লড়াই চলছে। সবারই এই লড়াইয়ে অংশনেওয়া উচিত ছিল। শামিল না হয়ে উলটে আক্রমণ করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসানো হচ্ছে।’ এদিনের ঝামেলার জেরে আমরাই গ্রামের কোনও কর্মীই ডিএসপি কারখানায় কাজে যাননি৷ আইএনটিটিইউসির জেলার চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন দাশু বলেন,‘বেশ কয়েকদিন ধরেই এই অভিযোগ আসছে দলের কাছে৷ সব বিচার করে দেখা হচ্ছে। দুই একদিনের মধ্যেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দল।’ উত্তপ্ত পরস্থিতি সামাল দিতে এখনও আমরাই গ্রামে মোতায়েন পুলিশ বাহিনী৷
ছবি: উদয়ন গুহরায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.