বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: কোন্দল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। লবি বিনা কংগ্রেস আর ‘সোনার পাথরবাটি’ – একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। অধীররঞ্জন চৌধুরি (Adhir Ranjan Chowdhury) প্রদেশ কংগ্রেসের (West Bengal PCC) নয়া সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর যতটা সোজা মনে হয়েছিল, ঘটনা ঠিক উলটো। নতুন কমিটিতে সব পক্ষকে জায়গা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেসের ছবি সামনে আনার চেষ্টা হলেও, তা কার্যত অধরাই থেকে গেল। রাজ্যস্তরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দেওয়া গেলেও জেলায় জেলায় কোন্দল নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেসের নয়া সভাপতির। কয়েকটি জেলায় শুরু হয়েছে দলের অন্দরে কাদা ছোঁড়াছুড়ি। বামেদের সঙ্গে জোট গঠনের আগে এই কোন্দল কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রদেশ নেতৃত্বের।
হাইকমান্ডকে কথা দিয়েছিলেন, দায়িত্ব নিয়ে সব পক্ষকে সঙ্গে করে চলবেন। নতুন রাজ্য কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দিল্লিকে সেই বার্তাই দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। দলের রাজ্য কমিটিতে বিরোধী পক্ষের প্রায় সব নেতাকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন তিনি। ‘প্রবীণ’ নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়ে দিয়েছেন গুরুদায়িত্ব। এমনকী প্রয়াত প্রদেশ সভাপতির পুত্র রোহন মিত্রকে যুবর দায়িত্ব থেকে তুলে এনে দলের সাধারণ সম্পাদক করেছেন।
দু-একটি জেলা ছাড়া অধিকাংশ জেলায় পুরনো সভাপতিদের বহাল রাখা হয়। সঙ্গে হাইকমান্ডের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে জোট গঠনে নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন অধীর। একদফা কথা বলেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে। পুজোর আগে প্রাথমিক কথাবার্তা এগিয়ে রাখতে চান বলে ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের কাছে নিজের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
এসব কাজকর্মের মাঝে নয়া সমস্যার মুখে প্রদেশ কংগ্রেস। জেলায় জেলায় প্রকাশ্যে কোন্দলে মেতেছে নেতা,কর্মীরা। নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ কয়েকটি জেলায় শুরু হয়েছে কাদা ছোঁড়াছুড়ি। সোশ্যাল মিডিয়াকে ঢাল করে চলছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। যেমন, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা রাজ্য কমিটিতে স্থান পাওয়া এক কাউন্সিলরকে শাসকদলের ‘গুপ্তচর’ বলে ফেসবুকে গালমন্দ করেছেন। পালটা জবাব দিয়েছেন তিনিও।
এআবার নদিয়ার সদ্য বিজেপি থেকে ঘরে ফেরা এক প্রাক্তন জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন পুরনো কংগ্রেসিরা। তাঁকে কেন দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল, তা নিয়ে তোলা হয়েছে প্রশ্ন। দলে ফেরা প্রাক্তন জেলা সভাপতিকে ভোটে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাঁরা দল ছাড়বেন বলে হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। বিজেপি তাঁকে টিকিট দেবে না, বুঝতে পেরেই তিনি ফের দলে ফিরেছেন বলে পুরনো নেতাদের অভিযোগ। আসলে, জেলাস্তরে এখনও যে সোমেন মিত্রর প্রভাব অনেকটাই, এই কলহ তারই বহিঃপ্রকাশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.