সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: উন্নয়নের কাজে ব্যর্থ, এই অভিযোগে তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন উপপুরপ্রধান-সহ দলের কাউন্সিলররাই।শাসকদলের এমনই অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভায়। তৃণমূল পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছেন তৃণমূলের সাত কাউন্সিলর। ২৪ তারিখ তাঁরা রঘুনাথপুর মহকুমা শাসকের কাছে এই অনাস্থাপত্র জমা করেন। তবে বিধি
অনুযায়ী মহকুমা শাসকের কাছে তা গৃহীত হয়নি।
শুক্রবার তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাবটি পুরপ্রধানের কাছে জমা করেন। আর ওই অনাস্থা পাওয়ামাত্রই সেই সংক্রান্ত বৈঠকের আগেই পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কাছে পাঠিয়ে দেন। যদিও তা বিধি অনুযায়ী মহকুমা শাসকের কাছে পাঠানো উচিত।
এই পুরসভায় তেরোটি ওয়ার্ডের মধ্যে শাসক দলের কাউন্সিলর ন’জন। তাঁদের মধ্যে সাতজনই এই অনাস্থায় সই করেন।ফলে অনাস্থা ঘিরে শিল্পশহর রঘুনাথপুরে তৃণমূলের অন্দরে তোলপাড় চলছে। এই অনাস্থাপত্র পেয়ে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান প্রকাশ্যে রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকার এক তৃণমূল নেতাকেই কাঠগড়ায় তোলেন।
রঘুনাথপুর পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি উন্নয়নের কাজ কী করেছি, তা ওয়ার্ডে ঘুরলেই বোঝা যাবে। রঘুনাথপুর বিধানসভার এক তৃণমূল নেতার ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে অনাস্থা আনা হয়েছে। আমি অনাস্থা সংক্রান্ত বৈঠকের আগেই পুরপ্রধানের পদ ছেড়েছি। দলের রাজ্য নেতৃত্ব, দুই পর্যবেক্ষক-সহ জেলা সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি। এবার দল যা বলবে তা মাথা পেতে নেব।”
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভায় মোট ১৩টি ওয়ার্ড। ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে শাসক দল আটটি ওয়ার্ডে জেতে। কংগ্রেস ও বিজেপির দখলে আসে একটি করে আসন। সিপিএম জিতেছিল তিনটি ওয়ার্ডে। পরবর্তীকালে বিজেপির ১ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। অন্যদিকে কংগ্রেস কাউন্সিলর বিজেপিতে আসেন। ফলে এই পুরসভায় এখন কংগ্রেসের আসন শূন্য। বিজেপির ১, তৃণমূলের ৯ এবং সিপিএম ৩।
শাসক দলের সাত কাউন্সিলর তাঁদের অনাস্থাপত্রে লিখেছেন, গত দু’বছর ধরে পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় উন্নয়নের কাজে ব্যর্থ। তাছাড়া তাঁর আচরণও ঠিক নেই। এই বিষয়ে অনাস্থা পত্রে সই করা দলের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান মদন বরাট বলেন, “পুরপ্রধান আমাদের সঙ্গে, এমনকী সাধারণ মানুষের সঙ্গে ব্যবহার খারাপ করছেন। উন্নয়নের কাজেও তিনি ব্যর্থ। তাই আমরা অনাস্থা আনতে বাধ্য
হলাম।”
অনাস্থাপত্রের প্রতিলিপি তাঁরা তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, রঘুনাপুর শহর তৃণমূল সভাপতি সুধীর বাউরি ও জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কাছেও পাঠান। একইভাবে পুরপ্রধানও তাঁর পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি রঘুনাথপুরের বিধায়ক ও দলের টাউন সভাপতির কাছে পাঠিয়েছেন।
অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে, বিধি অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধানকে
বৈঠক ডাকতে হয়। কিন্তু তিনি বৈঠক না ডাকলে সাতদিনের মধ্যে তা উপপুরপ্রধানকে বৈঠক ডাকতে হবে। কিন্তু সেই বৈঠকও না হলে তার সাতদিনের মধ্যে যে কোনও তিনজন কাউন্সিলর বৈঠক ডাকবেন। তাঁরাও ওই বৈঠক এড়ালে, ১৫দিনের মধ্যে জেলাশাসককে অনাস্থা সংক্রান্ত বৈঠক ডাকার বিধি রয়েছে।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.