ছবি: প্রতীকী
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: করোনা (Corona Virus) রোগীর অসহয়তার সুযোগ নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া হিসেবে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে প্রশাসনের চাপে অধিকাংশ টাকা ফেরত দিলেও কিছুটা না দিয়েই চম্পট দিয়েছে অভিযুক্ত। অমানবিক এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক।
ঘটনার সূত্রপাত দিন পাঁচেক আগে। ১১ জুলাই দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি এক রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে পজিটিভ। ওই রোগী বিহারের গয়ার বাসিন্দা। সেই কারণে রোগীর পরিবারের সদস্যরা ঠিক করেন যে, আক্রান্তকে গয়ায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এরপরই অ্যাম্বুল্যান্সে খোঁজ শুরু করে তাঁরা। সরকারি সহায়তা পেতে আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তরের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে একটি সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হলেও হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া রোগীকে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলে জানানো হয়। এরপরই বুদ্ধ নামের স্থানীয় এক দালাল আবির্ভূত হয়। সে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যাবস্থা করে দেবেন বলে রোগীর পরিবারের কাছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়ে মাত্র ৩২০ কিলোমিটারের জন্যে এই বিশাল অঙ্কের ভাড়া দিতে রাজিও হয় রোগীর পরিবার। যদিও পরে দরাদরি করে তা নামে ১ লক্ষ ৪০ হাজারে।
হাসপাতাল চত্ত্বরেই নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালক তথা মালিক রবি গড়াই। সন্ধেয় রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হতেই শুরু হয় আসল ‘অত্যাচার’। অভিযোগ, সামান্য কিছুদুর গিয়েই অভিযুক্ত রবি গড়াই বলে বাকি ১ লক্ষ টাকা তখনই না দিলে রোগীকে নামিয়ে চলে যাবে। বাধ্য হয়ে ‘গুগল পে’র মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দেন তাঁরা। গয়ায় রোগীকে নামিয়ে দিয়ে চলেও আসে রবি। এরপরই রোগীর ছেলে জিত সেনগুপ্ত দুর্গাপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক মৃণাল দত্তকে পুরো বিষয়টি ফোনেই জানান। পরে মেলে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ পেয়েই অভিযুক্তকে তলব করেন মহকুমাশাসক। রোগীর বাঁকুড়ার এক আত্মীয়ের সামনে মৃণালবাবুর মধ্যস্থতায় ১ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেয় রবি গড়াই। মূল ভাড়া ঠিক হয় ২৮ হাজার টাকায়। বাকি ১২ হাজার টাকা নিয়ে আসছি বলে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে আর খোঁজ নেই অভিযুক্তের।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি (১) পূর্বের কাছে বিষয়টির তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক অনির্বান কোলে। মহাকুমা শাসকের কথায়, “কোভিড রোগীদের সহায়তা করুন। প্রতারণা নয়। এটি অমানবিক আচরন। আমি পুলিশকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলেছি। এই ঘটনায় যদি কোন চক্র যুক্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি পুলিশকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.