চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: প্রকৃতিকে তুষ্ট করতে ও গরমের হাত থেকে বাঁচতে ইন্দ্র দেবতার পুজোর চল শুরু হয়। আবার বিজ্ঞানের যুক্তিও রয়েছে বিস্তর। মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমায় আজও নিয়ম মেনে পালিত হয় ইন্দ্র দেবতার পুজো। মানুষের সঙ্গে যে প্রকৃতি ও প্রচলিত উৎসব অনুষ্ঠান পালাপার্বণে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইন্দ্রধ্বজ বা ইদপুজোর মধ্য দিয়ে। সেখানে কৃষিজীবীরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নততর প্রকৃতিবিদ্যার ব্যবহার করেন। তেমনই বায়ু চলাচলের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নিরূপণের অনুষ্ঠান হচ্ছে ইন্দ্রপুজো। আদিবাসী সমাজে এই পুজো আজও নানা নামে প্রচলিত আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জীতেন্দ্রনাথ ঘোষের কথায়, “কথিত আছে বহুকাল পূর্বে চেদিরাজা উপরিচল বসু এই উৎসব চালু করেন। ভাদ্র মাসের শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে রবির দক্ষিণায়ন আরম্ভ হয়। যাকে বলা হয় বামন দ্বাদশী বা ইন্দ্রদ্বাদশী। গ্রামবাংলায় এদিন আড়াই হাত বেলকাঠের উপর লম্বা বাঁশ পোঁতা হয়। সেই বাঁশের মাথায় একটি ছত্র তৈরি করে বায়ুর দিক দেখা হয়। চাল কুমড়ো, পাঁঠা, কিন্দুরি বলি দিয়ে ইন্দ্রপুজোর সূচনা হয়। বহুদিন আগে পূর্ব ভারতের কোনও কোনও দেশীয় রাজা, সামন্ত রাজা, জমিদাররা পরিষদবর্গদের নিয়ে উৎসব করতেন। সেখানে প্রজারা সমবেত হতেন। রাজা স্বয়ং মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইন্দ্র দেবতার পুজোর সূচনা করতেন। রাজা একটি দীর্ঘ বেলকাঠ পুঁততেন। তাঁর মাথায় বাঁধা হত একটা বড় বাঁশ। আলোচ্য বিষয়, দক্ষিণায়ন আরম্ভের দিকনির্ণয়। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে বাতাসের গতিপ্রকৃতি নিরূপণ করা হত। বাতাস ও মেঘের গতিপ্রকৃতি ও বৃষ্টিপাতের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেকালে ইন্দ্রপুজোর মধ্যে দিয়েই সেগুলি পর্যবেক্ষণ করতেন।
এই সহজলভ্য সর্বজনীন পদ্ধতিতেই হত কৃষিকাজ। ফসল বৃদ্ধির কামনায় ইন্দ্রপুজোর অনুষ্ঠানের নিবিড় সম্পর্ক আছে। গ্রামবাংলায় প্রচলিত বৃষ্টিপাতের দেবতার পুজো একটা সময় মানভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হত। বর্তমানের রাঢ়বঙ্গের অনেক গ্রামে এখনও কালিতলা, ষষ্ঠীতলার মতো ইন্দ্রতলাও রয়েছে। মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার শ্রীহট্ট ইন্দ্রতলা, কান্দির জেমো ইন্দ্রতলা প্রভৃতি গ্রামে ইন্দ্র দেবতার থান রয়েছে। এখনও পুজোর দিনে ছোটখাটো মেলা বসে। পরের দিন কুমারী মেয়েরা এখান থেকে মাটি নিয়ে বাড়ির মধ্যে মালসায় বীজ স্থাপন করে শুরু হয় ভাজু উৎসব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.