জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: রপ্তানির মাল নিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার পর ভারতীয় ট্রাক চালকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে৷ জোর করে টাকা আদায় ও অত্যাচারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেট্রাপোল সীমান্তে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে কর্মবিরতি শুরু করল পেট্রাপোল ট্রাক চালক-সহ ৭টি সংগঠনের সদস্যরা। সূত্রের খবর, দৈনিক প্রায় কয়েকশো কোটি টাকার দ্রব্য আমদানি রপ্তানি হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ ভারতীয় ট্রাক বিভিন্ন দ্রব্য নিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে যায়। আমদানি রপ্তানি বন্ধ হলে দৈনিক প্রায় ৩০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
ভারতীয় চালকদের অভিযোগ, এদেশ থেকে ট্রাকচালকরা পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে গেলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা ভারতীয় চালকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে৷ ভারতীয় ট্রাকচালকদের বক্তব্য, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকার পর বেনাপোল গেট থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশিদের টাকা তোলা। যার কোন রসিদ পাওয়া যায় না। কারও কাছ থেকে ২ হাজার কারও কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেয় বলে অভিযোগ। টাকা না দিলে চলে অত্যাচার, গালিগালাজ। গাড়ির ব্যাটারি, মালপত্র চুরি করে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি এক ভারতীয় ট্রাকচালক টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। দিন কয়েক আগে এক ভারতীয় ট্রাক থেকে ব্যাটারি চুরির ঘটনা ঘটে। স্বপন বিশ্বাস নামে এক চালকের কথায়, “বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার চেষ্টা করে বাংলাদেশ শ্রমিক ও বেনাপোল বন্দরের লোকেরা৷ যার পরিমাণ ভারতীয় ৪ হাজার টাকা প্রায়।”
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি কর্মবিরতি পালন করে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিল ভারতীয় শ্রমিক, ও ট্রাক মালিক সংগঠন। কর্মবিরতির জেরে ওইদিন সকাল থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফের ভারতীয় শুল্ক দপ্তরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে ৭ দিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিলে কর্মবিরতি তুলে নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু ৭ দিন চলে গেলেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ফের মঙ্গলবার থেকে কর্মবরিতি শুরু করে পেট্রাপোলের মালিক, কর্মচারি শ্রমিক সংগঠন। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে বাংলাদেশে হওয়া অত্যাচার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। আমদানি রপ্তানি বন্ধের ফলে যশোররোডে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে ট্রাক৷ ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি দিলীপ দাস বলেন, “আমরা কেন টাকা দেব? যতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠু সমাধান না হবে আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাব৷” এদিন দুপুরে বাংলাদেশের ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট এর একটি প্রতিনিধিদল ভারতে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বললেও কোন সমাধান সূত্র মেলেনি বলে জানা গিয়েছে।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট এসোসিয়েশন এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বেনাপোলে এই অত্যাচারের ফলে বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভবিষ্যতে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ হাই-কমিশনে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যত সময় পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান না হবে কর্মবিরতি চলবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.