নন্দন দত্ত, সিউড়ি: প্রতিবন্ধীকে সাহায্য করতে এসে তাকে জীবনসঙ্গীই করে ফেললেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান৷ শুক্রবার রামপুরহাটে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করলেন ৮১ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়েকে৷ শনিবার ট্রাই সাইকেলে চেপেই স্বামীর গলায় বরমাল্য দিলেন ভাদুলক্ষ্মী দাস৷ আর জীবনসঙ্গীনির থেকেও এক প্রতিবন্ধীর মনে আনন্দ দিতে পারায় খুশি সুজিত মাইতি৷ তাঁদের দেখতে তাই শনিবার ভিড় জমল ময়ূরেশ্বরের ঘোষপাড়ায়৷
জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী নন ভাদুলক্ষ্মী৷ ছ’বছর বয়সে ছাদ থেকে পড়ে বাড়ির বড় মেয়ের দু’টো পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়৷ সেই থেকে লড়াই করেও আর নিজের পায়ে আর দাঁড়াতে পারেনি ভাদু৷ কিন্তু তিনি থেমেও থাকেননি৷ গাড়ি চালকের মেয়ে ভাদু প্রথমে পা ঘষে পরে একটা ট্রাই-সাইকেল পেয়ে সেই নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ সেভাবেই উচ্চ মাধ্যমিকও পাস করেছেন৷ মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য৷ দারিদ্রসীমার নিচে থাকলেও বিপিএলের কোনও স্বীকৃতি মেলেনি তাঁদের পরিবারের৷
এই সাইকেলে চেপেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে বলে ভেবেছিলেন ভাদুলক্ষ্মী৷ কিন্তু গত জুলাই মাসে হঠাৎই অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে গেল৷ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির গোপাল থেকে এক যুবক তাদের বাড়িতে এসে হাজির৷ পেশায় সিআইএসএফের জওয়ান সুজিত৷ রাঁচিতে কর্মরত৷ তিনি এসে ভাদুদেবীকে একটি সাইকেল দেওয়ার প্রস্তাব দেন৷ পরমুহূর্তে সেই সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়েও নেন৷ খানিকটা হকচকিয়ে যান ভাদু৷ পরের মাসে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সেই জওয়ান হাজির হন ময়ূরেশ্বরের প্রত্যন্ত গ্রামে৷ ভাদুদেবীর বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দাসবলছেন, “প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি৷ প্রতিবন্ধী মেয়েকে কেউ বাড়ি এসে উদ্ধার করবে তা আশাতীত ছিল৷”
বিয়ের বিষয়ে ভাবার জন্য মেয়ের পরিবারকে একমাস সময়ও দেন সুজিত৷ অবশেষে শুক্রবার হাজির হন বিয়ের জন্য৷ কথামতো প্রস্তুত ছিল মেয়ের পরিবার৷ শুক্রবার রেজেস্ট্রি হয়৷ শনিবার তারাপীঠের মা ষষ্ঠীর মণ্ডপে সাইকেলে চড়েই সাতপাকে বাঁধা পড়লেন সুজিত-ভাদুলক্ষ্মী৷ সুজিত বললেন, “আমরা ছোট থেকেই খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছি৷ দুস্থের কথা শুনলেই সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করেছি৷ ভাদুলক্ষ্মীর কথাও আমি জানতে পারি৷ ওকে দেখে মনে হল ওর জন্য সারাজীবন আমার পাশে দাঁড়ানো দরকার৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.