রাহুল চক্রবর্তী: ছিল ১০ হাজার টাকা। হল ১৫ হাজার। রেশনে দু’টাকা কেজি দরে চাল পাওয়ার যোগ্যতামান হিসাবে মাসিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমা পাঁচ হাজার টাকা বাড়াল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পরিণামে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা আরও বহু মানুষকে অন্ত্যোদয় যোজনার মতো খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে বলে সরকার আশাবাদী।
খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, নতুন সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। রাজ্যের গরিব মানুষের স্বার্থে মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজেই এই পদক্ষেপ করেছে। শুধু তা-ই নয়, ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রদান, পরিবর্তন ও সংশোধনের চলতি কর্মসূচিতেই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শুক্রবার বলেন, “রাজ্যের মানুষের কথা ভেবেই সরকার ব্যবস্থাটা করেছে। এ ব্যাপারে দিল্লির কোনও নির্দেশ নেই। পুরোটাই বাংলার সরকারের সিদ্ধান্ত।”
সাবেক রেশন কার্ড উঠিয়ে দিয়ে সব উপভোক্তাকে ডিজিটাল কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি ঘিরে অভাব-অভিযোগের অন্ত নেই। যেমন, গ্রাম বাংলার বহু পরিবার প্রচুর চেষ্টা করেও এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি। আবার যাঁদের দু’টাকার চাল পাওয়ার কথা, তাঁরা পাচ্ছেন ১৩ টাকা কেজি দরে চালের কার্ড। অনেকে একাধিকবার আবেদন করেও ডিজিটাল কার্ডের মুখ দেখেননি। অভিযোগের ঢেউ খাদ্য দপ্তরের অন্দর ছাড়িয়ে নবান্নে পৌঁছয়। বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাদ্য দপ্তরকে নির্দেশ দেন, ডিজিটাল রেশন কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সুরাহা করতে শিবির খোলা হোক। সর্বদলীয় বৈঠকেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিবির শুরু হয়েছে। চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিটি জেলার বিডিও অফিস, পুরসভা, কর্পোরেশনের বরো অফিসে এই ক্যাম্প চলছে।
খাদ্য দপ্তর জানিয়েছে, ডিজিটাল রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্ত যোগ্য ব্যক্তি এখনও তা পাননি, তাঁরা আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। এবং ডিজিটাল রেশন কার্ড সংক্রান্ত কোনও পরিবর্তন, সংশোধনের প্রয়োজন থাকলে, তা এই শিবির থেকে করা যাবে। মাসিক আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রসঙ্গে খাদ্য দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ আগরওয়াল বলেন, “মানুষের কাছে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য। সেই কারণে মাসিক আয়ের টাকা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ হাজার। এখানে কেন্দ্রের কোনওরকম নির্দেশের বিষয় নেই। পুরোটাই করেছে রাজ্য সরকার।”
কিন্তু দু’টাকা কেজি দরে চাল পাওয়ার জন্য কারা ডিজিটাল রেশন কার্ড পাবেন, সেক্ষেত্রেও সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত রয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বরের আগে বিপিএল তালিকাভুক্ত যে পরিবারের কোনও একজন সদস্যের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা ছিল, তাঁরা আবেদন করতে পারতেন। এবার তা পাঁচ হাজার টাকা বাড়াল সরকার। গ্রামাঞ্চলের মানুষদের দু’চাকা, চার চাকার গাড়ি থাকলে এবং শহরাঞ্চলের মানুষদের গাড়ি, এসি, ওয়াশিং মেশিন থাকলে বিত্তশালী হিসাবে ধরা হয়। তাঁরা দু’টাকা কেজি দরে চাল পাওয়ার জন্য ডিজিটাল রেশন কার্ড পাবেন না বলে জানিয়েছে সরকার। বিত্তশালী ব্যক্তিদের নয়া রেশন কার্ডের জন্য নতুন একটি ১০ নম্বরের ফর্ম আসছে। যার দ্বারা বিত্তশালী রেশন কার্ড পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.