Advertisement
Advertisement

Breaking News

এটাই বসিরহাট, ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের জন্য অর্থ সংগ্রহে মুসলিমরা

সবার ওপরে মানুষ সত্য।

In riot hit basirhat Muslim collect money to help hindu neighbours
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 9, 2017 2:34 pm
  • Updated:July 9, 2017 2:34 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুবৃত্তদের আস্ফালন। অস্ত্র নিয়ে হুঙ্কার, ভাঙচুর, লুঠপাট, আগুন। কয়েক দিনের জন্য বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশ যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে পড়েছিল। তবে অন্ধকার কাটিয়ে ভোর আসছে সীমান্তবর্তী এলাকায়। সম্প্রীতির হাতিয়ার যেখানে বাঁচতে শেখায়। এই যেমন বসরিহাটের ত্রিমোহিনী। হানাহানির আঁচ এখনও এই বর্ধিষ্ণু এলাকা জুড়ে। এলাকার হিন্দুদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। কারও বাড়ি ভাঙচুর, কারও দোকান লুঠপাট হয়েছে। আচমকা বিপদে পড়ে যাওয়া মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন মুসলিমরা। হিন্দু ভাইদের জন্য চাঁদা তুলে কারও দোকান মেরামতি, কারও ঘর তৈরিতে তারা এগিয়ে এসেছেন। সবাই এক বাক্যে বলছেন দুবৃত্ত, বহিরাগতদের জন্য এলাকার দুর্নাম আর বাড়াতে দেবেন না।

[এবার গুজরাট দাঙ্গার ছবিকে বসিরহাটের বলে ছড়ানোর অভিযোগ]

গত মঙ্গলবার বসিরহাট, বাদুড়িয়া, দেগঙ্গার সাধারণ মানুষের জীবনে যেন আচমকা ঝড় নেমে এসেছিল। গোষ্ঠী সংঘর্ষ। একে, অপরের বিরুদ্ধে তেড়ে যাওয়া। অশান্তির বিষ গিলে নিয়েছিল এক একটা জনপদকে। উসকানি, বহিরাগতদের দাপাদাপিতে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কার্যত মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল ওই সমস্ত এলাকা। ঝড় থামানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন এলাকার শান্তিপ্রিয় লোকজন। তাদের চেষ্টায় ছন্দে ফিরছে বসিরহাট। তবে যাদের মাথার চাল চলে গেছে, দোকান খানখান, তাদের কী হবে? বসিরহাটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিন্দুদের সম্পত্তি ছিল নিশানা। ত্রিমোহিনী, পিফা, ভ্যাবলা- অশান্তির আগুনে পুড়েছে এক একটা এলাকা। বসিরহাটের ত্রিমোহিনীতে বহু মানুষের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, দোকানে হয়েছে লুটপাট। পুনর্গঠন কীভাবে হবে? প্রশ্ন ওঠার আগেই উত্তর দিতে এগিয়ে এসেছেন ইসমাইল গাজি, আশরাফুলরা। চোখের সামনে এসব যেন তাদের আর সহ্য হচ্ছে না। গাজির কথায়, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ও এমন কিছু হয়নি। মঙ্গলবার যা হয়েছে তা দাঙ্গা নয়। কিছু বহিরাগত এবং এলাকার কয়েকজন এর সঙ্গে যুক্ত। গাজিরা শুধু আঙুল তুলে ক্ষান্ত নয়, তারা হিন্দু প্রতিবেশীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। ২ হাজার টাকা প্রতিবেশী অজয় পালকে দিতে চান তাঁরা। গত মঙ্গলবার অজয়ের দোকানে ভাঙচুর হয়। প্রায় ১৫ হাজার টাকার সামগ্রী লুট করে দুষ্কৃতীরা। অজয় বলছেন,  প্রতিবেশীদের উদ্যোগ দেখে তাঁর কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়েছে। এলাকার মুসলমান বন্ধুরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা শুরু করার জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলছেন।

Advertisement

[বসিরহাট নিয়ে রিপোর্ট নেই, রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্র]

শুধু অজয় নন, এলাকার বাসিন্দা রুমা দে-কেও ২ হাজার টাকা দিতে চান ইসমাইলরা। বসিরহাটের ভ্যাবলার মসজিদপাড়া এলাকাতেও এমন নজির রয়েছে। মসজিদপাড়ার এরশাদ আলি বলছেন, ছেলেবেলা থেকে তাঁরা একে অপরকে চেনেন। অনেক হিন্দু বন্ধুর সঙ্গে ছোটবেলা থেকে তার হৃদ্যতা। এরশদারা ক্ষতিগ্রস্তদের বলেছেন সবরকমভাবে তারা পাশে থাকবেন। পাশাপাশি বাড়ি মেরামতির জন্য সাহায্যের কথা বলেছেন। এরশাদের ছেলেবেলার বন্ধু বিনয় পাল। আতঙ্ক এখনও তাঁর চোখে-মুখে। বিনয়ের কথায়, যখন উন্মত্ত লোকজন বাড়িতে হামলার চালায়, তখন তিনি এরশাদকে ফোন করেন। এরশাদ দ্রুত চলে আসায় প্রাণে বাঁচেন বিনয়। প্রাণ বাঁচলেও, বিনয় তাঁর ওষুধের দোকান বাঁচাতে পারেননি। বিনয়দের মতো বন্ধুদের পাশে দাঁড়াতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন এরশাদরা। যাই হোক না কেন, বসিরহাটের পরম্পরাকে তারা ভাঙতে দেবেন না। এরশাদরা দেশকে জানাতে চান বসিরহাট, বাদুড়িয়ায় মনুষ্যত্ব এখনও হারিয়ে যায়নি। ধর্মের মোড়কে তাঁরা কাউকে চেনেন না। বরং বিপদের সময় আরও প্রবলভাবে পাশে থাকতে চান।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement