রাজা দাস,বালুরঘাট: ছ’মাসের মাথায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায়। CAA ও NRC’র প্রতিবাদেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন বলে জানিয়েছেন লিপিকা দেবী। যদিও সে কথা মানতে নারাজ বিজেপি। তাঁদের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের চাপের সামনেই মাথা নোয়ালেন লিপিকাদেবী। এদিকে তৃণমূল-বিজেপি টানাপোড়েনের ফলে জেলা পরিষদের অনেক কাজ আটকে ছিল। এবার সেই কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে বলে মনে করছে তৃণমূলও।
রবিবার বালুরঘাট শহরের দলীয় কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সভাধিপতি লিপিকা রায় তৃণমূলে যোগ দেন। সেখানে লিপিকা দেবীর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন জেলার অন্য তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলে যোগদানের পরেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় জানান, “NRC ও CAA’র প্রতিবাদে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছি। জেলা পরিষদের অনেক উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। সেই কাজগুলি করাই এখন লক্ষ্য। বিজেপিতে থেকে উন্নয়নের কাজ ঠিকমতো করতে পারছিলাম না।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ জানান, জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই যোগাযোগ করছিলেন। নতুন বছরের আগেই দলে ফেরার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন। এদিন তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেন।” জানা গিয়েছে, তৃণমূলের টিকিটেই জয়ী হয়েছিলেন লিপিকা। সভাধিপতি ফিরে আসায় জেলা পরিষদ এখন পুরোটাই তৃণমূলের দখলে চলে এল।
অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি বিনয় বর্মণ জানান, “সভাধিপতি তৃণমূলের যোগ দেবেন এমনটা জানা ছিল না। তবে এতে জেলা বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না। সিএএ নিয়ে সভাধিপতি হয়তো জানেন না।” বিজেপি নেতা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “সিএএ ইসুতে জেলা পরিষদে সভাধিপতি লিপিকা রায় তৃণমূলে যাননি। তৃণমূলের চাপে যোগদান করেছেন। সভাধিপতি বিজেপিতে যোগদান করার পরেই রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে তাঁর নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়।”
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদে ১৮ জন সদস্য নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে বোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতার পরাজয়ের দায়ভার এসে পরেছিল তৎকালীন তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র উপর। এরপরেই বিপ্লবকে পদ থেকে সরিয়ে অর্পিতা ঘোষকে তৃণমূলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরই বিপ্লব মিত্র গত ২৪ জুন দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তার সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ ১০ তৃণমূল সদস্য বিজেপিতে চলে যান। ফলে বিজেপি জেলা পরিষদে বোর্ড দখল করে। পরে অনেকেই তৃণমূলে ফিরে আসেন। এদিকে জেলা পরিষদের সংখ্যা গরিষ্ঠ হলেও সভাধিপতি বিজেপিতে থাকায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল। গত ১৩ ডিসেম্বর বিজেপি সদস্য তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মফিজউদ্দিন মিয়াঁ বিজেপি ছেড়ে নির্দল সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এবার এদিন জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সভাধিপতি-সহ জেলা পরিষদের মোট ১৪ জন সদস্য তৃণমূলের। বাকি চার সদস্যর মধ্যে বিজেপির তিন এবং নির্দল একজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.