গোবিন্দ রায়: বাইরে ঝুলছে কালো পর্দা। ভিতরে সারি সারি কম্পিউটার। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে পর্দার আড়ালে ঠিক কী চলছে! কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অবশ্য সবটা জানেন। পর্দার আড়ালে আসলে অবৈধ লটারির কারবারের কথা। যার নেশায় বুঁদ হয়ে রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মই এই বেআইনি কারবারে ঝুঁকছে। নেশা থেকে বাদ যাচ্ছে না মেয়েরাও। করোনা পরিস্থিতির জেরে মানুষের আর্থিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তার ওপর এভাবে পুজোর মুখে বেড়ে চলেছে অবৈধ লটারির রমরমা।
সীমান্তবর্তী শহর জুড়ে এখন ছেয়ে গিয়েছে এই অনলাইন অবৈধ অনলাইন লটারির করবার। গলি থেকে রাজপথ কোথাও পর্দা টানিয়ে পর্দার আড়ালে আবার কোথাও সন্ধ্যা নামলে প্রকাশ্যেই চলছে এই কারবার। সম্প্রতি এই নিয়ে হাসনাবাদ থানা এলাকা থেকে ল্যাপটপ ও বিভিন্ন সামগ্রী-সহ একজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। কিন্তু কমেনি, বরং পুজোর মুখে বেশ ফুলে ফেঁপে উঠছে এই অবৈধ লটারির কারবার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বসিরহাট (Basirhat) ৭২ নং বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অধর মার্কেটের সরু গলি, বসিরহাট চৌমাথা, বসিরহাট বোর্টঘাটে হকার্স মার্কেটের মধ্যে, বসিরহাট পুরসভা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বসিরহাটের এএসপি বাংলোর নিচে, একাধিক জায়গায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি জুয়া ব্যবসা। শুধু শহর বসিরহাটই নয়, আশেপাশে টাকি-হাসনাবাদ, বাদুড়িয়া, মাটিয়া, মিনাখাঁ, স্বরূপনগর-সহ বসিরহাট পুলিশ জেলার একাধিক এলাকায় এই বেআইনি কারবার। শুধু বসিরহাটই নয়, জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে বনগাঁ, বারাসাত, ব্যারাকপুর সর্বত্রই এই অনলাইন লটারির আড়ালে জুয়ার ব্যবসা, গ্যাম্বলিং রমরম করে চলছে।
ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন সমাজের সচেতন নাগরিক থেকে শুরু করে নেশায় সর্বস্বান্ত পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা। এতে সরকারি বৈধ লটারি ব্যবসাও ব্যাপক মার খাচ্ছে বলে দাবি লটারি ব্যবসায়ীদের। এক লটারি ব্যবসায়ী জানান, “এখন ডিজিটালের যুগ, তাই সরকারি লটারি বাদ দিয়ে সবাই ঝুঁকছে ওদিকে। এই মুহূর্তে নাগাল্যান্ড, সিকিম, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে বৈধ লটারির স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু অনলাইনে এই জুয়ার ধাক্কায় মার খাচ্ছে বৈধ লটারির ব্যবসা।” কীভাবে হয় এই খেলা? উত্তরে তিনি জানান, “সাধারণত বৈধ লটারির ফলাফল আসতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি। কিন্তু এখানে মিনিটের হিসেবে খেলা হয়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে করে যে যেমন টাকা লাগাতে পারে, জ্যাকপট লাগলেই মিলবে কয়েকগুণ টাকা।” বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দার দাবি, “জুয়ার টাকা পেতে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই।”
এপ্রসঙ্গে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার জবি থমাসকে জানান, “এই নিয়ে প্রচুর অভিযোগ আসছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই বেশ জায়গায় এই বেআইনি করবার বন্ধ করা হয়েছে। ধরপাকড় চলছে। শুধু পুলিশ নয়, এই করবার বন্ধ করতে এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকেও।” জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন অনলাইন লটারি বন্ধ ছিল। কিন্তু পুজোর আগে কয়েক মাস ধরে ফের এই বেআইনি কারবার বেড়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.