দেবব্রত মণ্ডল,বারুইপুর: ম্যানগ্রোভ অরণ্য থেকে কাটা হয়ে গেছে একের পর এক গাছ। ছোট ছোট গাছ কেটে পুঁতে দেওয়া হয়েছে মাটির নিচে। আর সেই মাটির উপরে গজিয়ে উঠছে অবৈধ সব বাড়িঘর। মহকুমাশাসকের অফিসের অদূরেই এই ঘটনা ঘটেছে। প্রায় কয়েক বিঘা জায়গাজুড়ে এমন ঘটনা নজরে পড়তেই তদন্ত শুরু করল ক্যানিং থানার পুলিশ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর ধরে মাতলা নদীর চরে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের মদতে মোটা টাকার বিনিময়ে চলছে অবৈধ নির্মাণ। এইসব বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে মাতলা নদীর চরের মাটি কেটে। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রচুর ছোট গাছ৷ ঘটনার কথা কানে পৌঁছতেই ক্যানিং থানার পুলিশ তদন্তে নামে৷ অভিযান চালানো হয়৷ তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই চর দখলকারী দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷
নদীর উপর সেতু তৈরি হওয়ায় খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়ে যায় প্রায় বছর দশেক আগে থেকেই। মজে যায় মাতলা নদী। আর সেই মজে যাওয়া মাতলার চরই এখন অবৈধ জমি কারবারীদের দখলে। চরে গজিয়ে ওঠার ম্যানগ্রোভ কেটে সেখানে অবৈধভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েকশো ঘরবাড়ি তৈরি হয়ে গেছে সেখানে।
মঙ্গলবার মাতলা নদীর চরে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক অবৈধ লোকজন ম্যানগ্রোভ কেটে জায়গা দখল করছে নতুন করে। বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে মাতলা চর। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন ক্যানিংয়ের বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘একের পর এক মাতলা নদীর চর দখল হচ্ছে। চারিদিকে ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে। এইভাবে মাতলা নদীর চর দখল করা কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই, মাতলা নদী তার আপন গতিতে চলুক।’
এর আগে বনমহোৎসবের সূচনা করতে গিয়ে বনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন, ম্যানগ্রোভ কাটা হলে এফআইআর দায়ের করতে হবে৷ সেইমতো জেলা প্রশাসন পুলিশের মাধ্যমে এনিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ মাতলা নদীচরের একদিকে যেমন ম্যানগ্রোভ কেটে অবৈধভাবে বসতি গড়া হচ্ছে, অন্যদিকে, তেমনি একের পর এক অবৈধ বালি খাদান গজিয়ে উঠেছে নদীর বুকে। সবমিলিয়ে, এখন সংকটে মাতলা নদী ও তার সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যানগ্রোভ জঙ্গল।
যে এলাকায় এমন অবৈধ কারবার চলছে, সেটি মাতলা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এ বিষয়ে মাতলা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হরেন ঘোড়ুই বলছেন, ‘কিছু রাজনৈতিক নেতার নাম করে এলাকার কিছু দুষ্কৃতী এই কাজ করছে। ঘটনাটা জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি উপযুক্ত তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পুলিশ গিয়ে সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং অভিযুক্তদের খোঁজ করছে। ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর বুকে ম্যানগ্রোভ কেটে কোনও বসতি গড়তে দেওয়া যাবে না।’ সবমিলিয়ে, ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে অবৈধ নির্মাণের বিষয়টিই এখন ভাবাচ্ছে জেলা প্রশাসনকে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.