সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: যদি হুড়মুড়িয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাসা! সত্যি, অবাক হওয়ার কিন্তু কোনও কিছুই থাকবে না। শুধু কলকাতা, শহরতলিতেই নয়। পুরুলিয়ার মতো প্রান্তিক পুরশহরেও লুকিয়ে আস্ত গার্ডেনরিচ!
কথাটা শুনে অদ্ভুত ঠেকছে না? কিন্তু এটাই যে বাস্তব, এই শহরেও। কারণ পুরুলিয়ার মতো ঘিঞ্জি শহরে পুর বিধি না মেনেই একের পর এক বহুতল নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। যে সকল রাস্তায় ‘জি প্লাস ছয়’ অর্থাৎ গ্রাউন্ড ফ্লোর মিলিয়ে মোট ৭ তলা বাড়ি তৈরি পুর বিধিতে নেই সেখানেও বাড়তে বাড়তে সাত তলা বাড়ি হয়ে গিয়েছে। এ সবই হয়েছে যখন অফলাইনে বাড়ির অনুমোদন মিলত সেই সময়। আর সেই ভুলের এখন খেসারত দিতে হচ্ছে বর্তমান পুর বোর্ডকে।
পুরুলিয়া পুরসভার তথ্য বলছে, এই শহরে এমন ১০ টি বাড়ি রয়েছে যারা বিধিভঙ্গ করে পরবর্তী করণীয় কি তার জন্য পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু এর সমাধানে কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না পুর কর্তৃপক্ষ। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “পুর বিধি মেনে বাড়ি না নির্মাণ করলে পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এই শহরে বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে যা বেনিয়ম হয়েছে সবই অফলাইনে যখন অনুমোদন দেওয়া হতো তখন। এমন বেআইনি বহুতল পুরুলিয়া শহরে কত রয়েছে তার আমরা তালিকা তৈরি করে বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপের পথে হাঁটব।”
তাছাড়া যে আর কোনও উপায় নেই এই প্রান্তিক পুর শহরের। কারণ প্রোমোটাররাজ থাবা বসিয়েছে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা এই প্রান্তিক পুর শহরেও। যেখানে ‘টাকা’-র বিনিময়ে বিধি ভেঙে একের পর এক বহুতল হয়ে যাচ্ছে। ফলে গার্ডেনরিচ হওয়া ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি যে জটিল থেকে জটিলতর হবে তা বুঝতে পারছে পুরুলিয়া পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাড়ির অনুমোদনে পুর বিধি টা কী? এই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বলছে, কোন রাস্তা এলাকায় বাড়ি নির্মাণ হবে সেই অনুপাতে অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে এই বিষয়ে দুটি ক্ষেত্রে ৫ ও একটি ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে ১০০ ফুট অনুমোদন থাকলে তার চেয়ে পাঁচ ফুট বেশি এককালীন জরিমানার মাধ্যমে ছাড় দেওয়া যায়। একইভাবে এলাকা ক্ষেত্রে ১০০ বর্গফুটে ১০৫। সেই সঙ্গে উচ্চতার ক্ষেত্রে ১০০ ফুটে ১০৫ ফুট। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরসভা যদি মনে করে ওই ৫ বা ১০ ফুট বিপজ্জনক। তাহলে তা ভেঙে দিতেও পারে। এমন বিধিও রয়েছে। সেই কারণেই গার্ডেনরিচের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে পুরুলিয়ার মত প্রান্তিক পুর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এই শহরের এমন চিত্রটা ছিল না। ২০১০ থেকে একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। আমূল পরিবর্তন হয় ২০১৬-র পর। আর এখন শহরের প্রায় অধিকাংশ রাস্তাতেই রীতিমতো ঘাড়, চোখ উঠিয়ে দেখতে হয় বহুতল ঠিক কতটা উঁচু! যেমন শহরের দেশবন্ধু রোড, রাঁচি রোডের বিভিন্ন বাইলেন, সাহেব বাঁধ এলাকা, কুকস কম্পাউন্ড এছাড়া অলি-গলিতে আরও কত! এই ধরনের বহুতলের ক্ষেত্রে এই শহরে গার্ডেনরিচের মত এখনও ভুরিভুরি অভিযোগ জমা পড়েনি ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ জমা পড়ুক বা নাই পড়ুক। চোখের সামনে দেখতে পাওয়া বাস্তব তথ্যকে সামনে রেখে আর কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চায় না পুরুলিয়া পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাই রবিবারের মধ্যরাতে ওই ঘটনার পরই মঙ্গলবার-ই পুরুলিয়া পুরসভা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে বিধি ভাঙা বহুতল কত আছে তার তালিকা তৈরি করতে।
এই শহরের বহু ঘিঞ্জি এলাকায় পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। যা পুর বিধি ভঙ্গ বলেই মনে করছে পুরুলিয়া পুরসভা। তবে আর নয়। একটা গার্ডেনরিচ চোখ খুলে দিয়েছে। সম্প্রতি এই শহরে যে সকল বাড়ির অনুমোদন দিয়েছে পুরসভা। যার এখন নির্মাণ কাজ চলছে। সেই সব বাড়ির নির্মাণে ইমারতি সরঞ্জামের গুণমান কেমন এবার থেকে সেই বিষয়টিতেও নজর রাখবে পুরুলিয়া পুর কর্তৃপক্ষ। এমন সিদ্ধান্তও নিতে চলেছে পুরুলিয়া পুরসভা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.