নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বাড়ির ছোট ছেলে যে সন্দেহভাজন, তিন বছর আগেই বুঝেছিলেন তার দাদারা। সোমবার বিহারের গয়া থেকে জঙ্গি সন্দেহে ইজাজ আহমেদ ধরা পড়ায় নিশ্চিত তার গ্রাম। তা সত্ত্বেও গ্রামবাসীদের কণ্ঠে অবিশ্বাসের সুর। বীরভূমের পাড়ুই থানার অবিনাশপুর মুসলিম পাড়া ইজাজের জঙ্গিপনা নিয়ে বিশ্বাস করতে পারছে না। গ্রামের মানুষ জানায় নিরীহ, ধর্মপ্রাণ, মাথা নিচু করে চলা ছেলেটি দেশদ্রোহী, মানতে পারছে না তারা। তবু তার পাড়া চাইছে ইজাজের বিচার হোক। হোক না পাড়ার নম্র ছেলে। কিন্তু দেশদ্রোহী তো!
ইজাজ আহমেদ ওরফে মহম্মদ ইউসুফ। তবে পরিবারের লোক তাকে মহম্মদ ইউসুফ নামেই চেনে। চার ভাইয়ের ছোট ইজাজ। বড় ভাই শেখ এহিয়া রাজমিস্ত্রী। মেজোভাই আবদুল খালেক নুনিগ্রামের মসজিদে থাকে। ছোটবেলায় পিতৃহারা ইজাজ গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়া শেষ করে নদিয়ার কুলসুনা মাদ্রাসায় পড়তে যায়। সেখানেই বিয়ে করে সংসারী হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, বছর তিনেক আগে দুই বাচ্চা আর স্ত্রী হাবিবা বিবিকে নিয়ে অবিনাশপুরে আসে সে। গ্রামের লোককে জানায়, মুর্শিদাবাদে সে চাকরি করে। বছর খানেক সে বাড়িতে থাকবে। পরে সেখানেই ফিরে যাবে। দাদার বাড়িতেই তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়।
ইজাজের মা রমিশা বিবি এখনও বিশ্বাস করতে নারাজ যে তার ছেলে জঙ্গি হতে পারে। তবে পেশায় কাঠমিস্ত্রী তৃতীয় ভাই ইয়ামিন বলেন, “সোমবার ভাই ধরা পড়তেই ভাইয়ের শ্যালক ফোনে আমাদের জানায়। এছাড়া ভাইয়ের সঙ্গে গত তিন বছর কোনও যোগাযোগ নেই। কারণ তিন বছর আগেই স্ত্রী ও তিন বাচ্চাকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ার পর পাড়ুই থানার পুলিশ এসেছিল ভাইয়ের খোঁজ করে। তখনও জানি না ভাইয়ের অপরাধ কী। তবে বলে গিয়েছিল ভাইয়ের সন্ধান চায়। আমরাও আমাদের মতন খোঁজ করি। ঠিকানা মেলেনি। সে কথা থানায় গিয়ে পুলিশকে জানিয়ে আসি।” প্রতিবেশী শেখ আজিম বলেন, “ছোট থেকে ইজাজ এত ধর্মপ্রাণ ছিল যে বোন ছাড়া লজ্জায় নিজের বৌদিদের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলত না। নিজের মতো থাকত। লাজুক ছিল ছেলেটি। কিন্তু কুলসুনায় মেজোভাই তাকে মাদ্রাসায় ভরতি করে দিয়ে আসার পরেই ও একরকম গ্রাম ছাড়া।”
তাদের দাবি, ইজাজের সঠিক বিচার হোক। ‘জঙ্গির গ্রাম’ বলে অবিনাশপুরের মুসলিম পাড়া এখন পরিচিত হচ্ছে। এতে স্বভাবতই মন খারাপ গ্রামবাসীদের। ইজাজের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার না এলেও ছোট ছেলের খোঁজে কয়েকদিন আগেই তাদের বাড়িতে এসেছিল পাড়ুই থানার পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং জানান, এসটিএফ ইজাজকে গ্রেপ্তারের পর যেমন নির্দেশ দিয়েছে, সেভাবেই নজরদারি চালাচ্ছে পাড়ুই থানার পুলিশ।
ছবি- শান্তনু দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.