ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: উত্তরবঙ্গের বক্সায় বাঘের সংসারে মন্দা। কিছুতেই বাড়ছে না পরিবার। ধরা পড়লে তাই ‘গার্হস্থ্য’ জীবনে পাঠানো হবে লালগড়ের বাঘকে! বহুদিন ধরেই প্রজননের জন্য বিস্তৃত নিরাপদ বনাঞ্চল মিলছে না বক্সা ব্যাঘ্র অভয়ারণ্যে। তাই পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও বাঘের সংখ্যা বাড়ছে না। কোর এলাকায় বন বসতি আর পর্যটকদের আনাগোনায় স্বাভাবিক বন্য জীবনে ব্যাঘাত ঘটেছে। সেই সমস্যা নিয়ে জেরবার হয়েই ভাবা হয়েছিল অন্য জায়গা থেকে বাঘ আমদানির কথা। এমন আকালে আচমকাই ভিনরাজ্য থেকে প্রায় দেবদূতের মতো এসে লালগড়ে ঢোকে নতুন পূর্ণবয়স্ক এই বাঘটি। তখনই ঠিক হয়, ধরা পড়লে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বক্সার নতুন সদস্য করে নেওয়া হবে তাকে। তাতে প্রজননের ক্ষেত্রে কিছুটা বৈচিত্র আসবে।
বনদপ্তরের আশা, বক্সার জঙ্গলে তার মন বসে গেলে সংসারও ভরে উঠবে। তবে যদি বাঘ ধরা পড়ে। দীর্ঘ এক মাস লেগে থেকে গত দু’দিনে বারদুয়েক বাঘের দেখা পেয়েছে বনদপ্তর। তবে সেই মুহূর্তে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এবং জঙ্গলমহলে উৎসাহীদের হট্টগোলে সে হাত ফসকে পালায়। দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, “খুব আশা জেগেছিল। এমন হলে যেমনটা হয় আর কী।” কিন্তু এভাবে হাতের সামনে থেকে ফসকে যাওয়ায় আফসোসের শেষ নেই দপ্তরের।
[স্কুলের ফর্মে ধর্ম উল্লেখ না করে নজির মহম্মদবাজারের ছাত্রীর]
আচমকা এভাবে সামনে পড়েও ফসকে যাওয়ায় খানিকটা যেন মন ভেঙে গিয়েছে বনদপ্তরের। লালগড়ের বাঘকে বক্সায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনই আর কিছু ভাবতে চাইছেন না আধিকারিকরা। ওড়িশার দিক থেকে তাড়া খেয়ে সংসারচ্যুত হয়েছে বাঘটি। এক কর্তার ঠাট্টা, “তা বলে তাকে তো বিবাগী বলা যায় না! সুযোগ পেলে নতুন কোনও পরিবারের সদস্য সে হতেই পারবে।” তবু তাঁর সতর্ক মন্তব্য, “না আঁচালে আর বিশ্বাস নেই। আগে ধরা পড়ুক। তার পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে ঝড়খালিতে। তার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
পাহাড় লাগোয়া ডুয়ার্সের জঙ্গলে সুন্দরবনের তুলনায় বাঘের সংখ্যা কম। বক্সায় এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কুড়িতে। এক সময় সংখ্যাটা বাড়লেও এখন তা থমকে রয়েছে। বিশেজ্ঞদের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে একটি বাঘের পরিবারের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল প্রয়োজন। বক্সার সংখ্যা অনুযায়ী সব মিলিয়ে তাই ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্রয়োজন। এই জঙ্গলে সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার। তার পরও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বন বসতি আর পর্যটক। তাদের আনাগোনা বাড়তেই বাঘের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানাচ্ছে দপ্তর। সেই কারণেই ভিনরাজ্যের অতিথির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
বাঘ যদি এ যাত্রায় ধরা পড়ে, তবে প্রথম স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই দেখা হবে সে এখনও বড় শিকারে সক্ষম কিনা। অর্থাৎ তার প্রধান কেনাইন দাঁত মজবুত কি না। তা পরীক্ষা করার জন্য বাঘকে অজ্ঞান করে আপাদমস্তক খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন। বনদপ্তর প্রথমেই জাল ছুড়ে বাঘ ধরে না। নিয়ম অনুযায়ী তাকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে অজ্ঞান করা হয়। কিন্তু লালগড়ে এমন কোনও অভিজ্ঞতার সামনে দপ্তরকে পড়তে হবে, তা জানা ছিল না। সে কারণেই তার ব্যবস্থাও মজুত ছিল না। এই পরিস্থিতিতেই সুন্দরবন থেকে বাঘ ধরার জন্য অভিজ্ঞ দলকে নিয়ে আসা হয়েছে। তারাই এখন বাঘের পায়ের ছাপ খুঁজে তাকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে। ধরা পড়লে তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তবেই তাকে পাঠানা হবে উত্তরবঙ্গে।
[অ্যাপ ক্যাবের ধাক্কা, আঙুল বাদ গেল বাইক আরোহীর]
বনদপ্তর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলের বিভিন্ন রেঞ্জে জীবিকার খোঁজে আদিবাসীদের যাতায়াত বেড়েছে। তার মধ্যে ট্রেকিংয়ের নেশায় বনে-বাদাড়ে সময়ে অসময়ে জঙ্গলে বেড়েছে পর্যটকদের যাতায়াতও। এই পরিস্থিতিতে বাঘের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটায়, প্রথমে ঠিক হয়, অভয়ারণ্য থেকে আদিবাসীদের কিছুটা সরিয়ে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে আদিবাসীরা রাজি না হওয়াতেই বিকল্প পথের খোঁজ চলছিল। কিন্তু কী তার উপায় হবে, তা ভেবে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে এমন প্রাকৃতিক উপায় হাতের সামনে মেলায় আশায় বুক বাঁধছেন দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বিষয়টি নিয়ে অতি সন্তর্পণে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। বলেছেন, “আগে বাঘ ধরা পড়ুক। পড়লে তাকে আমরা ঝড়খালি পাঠাব। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে। তার পর সে আদৌ বক্সার জঙ্গলের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে পারবে কি না, তা সবরকম পরীক্ষা করে তবেই বক্সায় পাঠানো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.