শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: শহরের লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল উত্তরের তিন ক্লাস্টার জেলার করোনা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে আসা কেন্দ্রের ইন্টার মিনিস্টেরিয়াল সেন্ট্রাল টিম। শুক্রবার শিলিগুড়ির করোনা পরিস্থিতি যাচাই করতে পরিদর্শনে বের হন কেন্দ্রের উচ্চপর্যায়ের ওই বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা। এদিন তাঁদের পরিদর্শনের দ্বিতীয় দিন ছিল। পরিদর্শনে বেরিয়ে তাঁরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ওই হাসপাতালের ভাইরাস রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মেলা প্রাঙ্গণ, নয়া বাজার এবং রেগুলেটেড মার্কেট পরিদর্শন করেন। বাজারগুলিতে শ্রমিক এবং বেশ কয়েক জন মালিকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। পথে যাওয়ার সময় শহরের বিভিন্ন জায়গায় লকডাউনের পরিস্থিতির ছবি তোলেন তাঁরা। পরিদর্শনের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিধি দলের চেয়ারম্যান বিনীত জোশী বলেন, “লকডাউন কম মানা হচ্ছে। পথেঘাটে মানুষ ঘুরছে।”
এদিনের পরিদর্শনে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমা শাসক দপ্তরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শচীন ভগত। পাশাপাশি পরিদর্শনে ছিলেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা বিশেষ প্রতিনিধি দলের চেয়ারম্যান বিনীত জোশী, অল ইন্ডিয়া ইনিস্টিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেলথের চিকিৎসক অধ্যাপক শিবানী দত্ত, ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির উপদেষ্টা (অপারেশনাল) ব্রিগেডিয়ার অজয় গাঙ্গোয়ার, কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের ডিরেক্টর ধর্মেশ মাকওয়ানা এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সহকারি সচিব এন বি মণি।
বিনীত জোশী আরও বলেন, “দ্বিতীয় দফায় আমরা পরিদর্শনে বেরিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে করোনা সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের তরফে অসহযোগিতা ছিল। কিন্তু এদিন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি এসেছেন। আমরা আশা করবো এই ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কালিম্পং যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা ভিআরডিএল এবং মাইক্রো বায়োলজি বিভাগ দেখেছি। যে সংখ্যায় রোগী আসছে সেই তুলনায় পরীক্ষা করার কিট পর্যাপ্ত রয়েছে।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, “কেন্দ্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এদিন আমাদের কাছে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড, রেসপিরেটরি ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট, ল্যাবরেটরি, পরীক্ষার কিট, রোগীদের অ্যাডমিশন সহ বেশ কিছু রিপোর্ট চেয়েছিলেন। সব তাই তাঁদের দেওয়া হয়েছে।”
এদিন সকালে প্রথমে ওই প্রতিনিধি দলের জলপাইগুড়ি জেলা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা যাননি। বিকেল নাগাদ আচমকা রানিডাঙার সশস্ত্র সীমা বলের সমূহ কার্যালয়ের মূল গেটের পরিবর্তে পিছনের গেট দিয়ে পরিদর্শনে বেরিয়ে যান। প্রথমে তাঁরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যান। সেখানে হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার, অধ্যক্ষ প্রবীরকুমার দেব, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত, মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অরুণাভ সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। সেখান থেকে বেড়িয়ে তাঁরা কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা এবং সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে যাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকে সেজন্য বিধান মার্কেটের সবজি বাজারকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু ওই বাজারটি বন্ধ থাকার কারণে সেখান থেকে নয়া বাজার পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।
নয়া বাজার থেকে সোজা তাঁরা চলে যান শিলিগুড়ি সংলগ্ন চম্পাসারির নিয়ন্ত্রিত বাজার বা রেগুলেটেড মার্কেটে। সেখানে পৌঁছেই তাঁরা সবজির স্টলের মালিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছে কিনা, ক্রেতাদের থেকে কতটা দুরত্ব বজায়ে রেখে সামগ্রী দেওয়া হয়, প্রতিদিন বাজার করতে আসা ক্রেতার সংখ্যা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয় কিনা সহ সামগ্রিক বিষয়ে জেনে নেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সেখান থেকে তাঁরা ফের এসএসবি ক্যাম্পে ফিরে যান। শনিবার তাঁদের কালিম্পং এবং শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগর পরিদর্শনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.