ফাইল ফটো
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: নোভেল করোনা ভাইরাসের মত মহামারী ঠেকাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনই এই মুহূর্তে সবচেয়ে উপযোগী। তার ব্যবহার স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা তাই এখন তুঙ্গে। কিন্তু চিন্তার ব্যাপার হল, ভারতের বিভিন্ন বাজারগুলিতে কয়েকদিন আগেও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জোগান ছিল পর্যাপ্ত। বর্তমানে তা যথেষ্ট কম। যেদিন থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন করোনা রোধে সক্ষম, তারপর থেকেই এই ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এই ওষুধ। আর তার জেরে গ্রাম বা শহরের বড় বড় ওষুধের দোকানে সংকট দেখা দিয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে স্বাস্থ্য দপ্তরকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে প্রতিটি জেলা বিশেষ করে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রাখতে হবে। শুধু জেলা হাসপাতাল নয়, যে সমস্ত এলাকায় COVID-19 হাসপাতাল বানানো হয়েছে, সেখানেও এই জীবনদায়ী ওষুধের যোগান রাখার নির্দেশ এসেছে। কিন্তু কয়েকদিন আগেও যে ওষুধটি হাতে গোনা কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো, সেটিই এখন অনেকে কিনে ঘরে মজুত করছেন। ফলে বাজার থেকে দ্রুত নিঃশেষিত হচ্ছে ওষুধটি। দেখা দিচ্ছে ‘কৃত্রিম’ সংকট। না জেনে, না বুঝেই বহু মানুষ প্যাকেট প্যাকেট হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কিনছেন। শুধু সাধারণ মানুষই নন, একই কাজের অভিযোগ উঠছে গ্রামীণ চিকিৎসক বা কোয়াক ডাক্তারদের একাংশের বিরুদ্ধেও।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন একটি সাধারণ মানের ওষুধ। কিন্তু এই মুহূর্তে যার কাজ অসাধারণ। দাম হাতের নাগালের মধ্যেই। একটি ওষুধের দাম ১০ টাকার ও কম। ফলে সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে গরিব মানুষ নির্দ্বিধায় সংগ্রহ করতে পারেন ঔষধ টি। আর এই সহজলভ্য হওয়ার কারণেই সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে। আর্থারাইটিস রোগীরাও ভুগছেন এই ওষুধের অভাবে।
এই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের ফার্মাসিস্ট রাজু ভট্টাচার্য বলেন, “কয়েকদিন আগেও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নির্দিষ্ট পরিচিত কয়েকজন মানুষ কিনতেন। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সেগুলো আমরা দিয়ে দিতাম। কারণ, শুধু ম্যালেরিয়া নয়, আর্থারাইটিস কমাতেও এই ওষুধ দারুণ কাজ করে। কিন্তু বর্তমানে এই ওষুধটি আর মিলছে না। প্রায় দু’সপ্তাহ যাবৎ এই ওষুধ অর্ডার দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।” ওষুধ বিক্রেতারা বহু ক্ষেত্রে আঙুল তুলেছেন হাতুড়ে চিকিৎসকদের দিকেই। তাঁদের অভিযোগ, বেশ কিছু হাতুড়ে চিকিৎসক না বুঝেই প্যাকেট প্যাকেট এই ওষুধটি সংগ্রহ করেছে। আর এতেই দেখা দিয়েছে আকাল।
তবে গ্রামীণ চিকিৎসকরা করোনা মোকাবিলার জীবনদায়ী ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের অপব্যবহার করেছেন, এই অভিযোগ মেনে নিতে রাজি নন। এ বিষয়ে এক চিকিৎসকের বক্তব্য, বিভিন্ন ওষুধের দোকানে তাঁরাই প্রচার চালিয়েছেন প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না দেওয়ার পক্ষে। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সত্যি নয়। বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা জয়নগর কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ ডঃ তরুণ মণ্ডলের কথায়, “আমরা গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কোথায় এই ওষুধের ব্যবহার হবে, তারও উল্লেখ করে দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত রোগী ছাড়া সুস্থ মানুষ এই ওষুধ খেলে অনেক বেশি জটিল সমস্যায় পড়বেন। কারণ, এর যথেষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।” কিন্তু শুনছে কে? করোনা রোধে এই মহৌষধটি মজুতের হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.