নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর অবশেষে দোষী সাব্যস্ত হল হায়দরাবাদ বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূলচক্রী ধৃত লস্কর জঙ্গী শেখ নইম ওরফে শেখ সমীর। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের রিপোর্ট ও ৩৯ জন সাক্ষীর বয়ানের উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যেই ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি শেখ সমীরের তিন সহযোগী শেখ আবদুল্লা ওরফে আলি ,মহম্মদ ইউনিস ও মুজাফফর আহমেদ রাঠোরকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। তখন ধৃত শেখ সমীর পলাতক থাকায় তাকে আদালতে হাজির করানো যায়নি। সেই সময় পলাতক থাকায় অভিযুক্তের বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন বাকি থেকে যায় আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্যদান। ২০০৭ সালে পেট্রাপোল সীমান্তের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে ওই চার লস্কর জঙ্গীকে গ্রেপ্তার করে বিএসএফ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় জিলেটিন স্টিক, নাইট্রো গ্লিসারিনের মতো বিস্ফোরক ও ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মানচিত্র।
ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ধৃতরা পাকিস্তানের লস্কর জঙ্গী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। এবং তারা করাচিতে একুশ দিনের ট্রেনিংও নিয়েছিল। এদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানের করাচি, একজন জম্মু-কাশ্মীর ও একজন হায়দরাবাদের বাসিন্দা। ধৃতরা ওই সময় পাকিস্তানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে পাসপোর্ট সহযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে৷ ঢাকার মুন হোটেলে থাকার পর সেখান থেকে চোরাপথে ভারতে প্রবেশ করে কলকাতার মদনমোহন বর্মন স্ট্রিটের একটি গোপন ডেরায় আশ্রয় নেয়। এবং গোয়েন্দারা এও জানতে পারেন ওই চক্রের মূল পাণ্ডা পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শেখ নইম। এরইমধ্যে বিচারপক্রিয়া চলাকালীন ২০১৬ সালে অন্ধপ্রদেশ থেকে তিহার জেলে ফেরার সময় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় নইম। তাতেও বিচারপ্রক্রিয়া না থামিয়ে ২০১৭ সালে তিন অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা দেন বিচারক। এরই মধ্যে পালিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় শেখ নইম ৷ এই ঘটনা চলাকালীন পালটা সরকারের কাছে নইমের খোঁজ ও জবাব চেয়ে মুম্বই আদালতে একটি সাজানো চক্রান্ত মামলা করেন শেখ নইমের মা। এরইমধ্যে বহু কষ্টে আবার নইমকে ধরতে সমর্থ হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ।
ধৃতকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, লস্কর কমান্ডারের নির্দেশমতো প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিল নইম৷ এরপরই এই চক্রান্তের অভিযোগে দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে একটি মামলাও রুজু হয় নইমের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে পুরনো মামলায় চলতি বছর ১০ অক্টোবর ফের নইম ওরফে শেখ সমীরকে তোলা হয় বনগাঁ মহকুমা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। একেবারে গোড়া থেকে বিচারকের সামনে নইম নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও বিচারকের ওই একটি প্রশ্নেই আর কোনও উত্তর দিতে পারেনি ধৃত অভিযুক্ত। বিচারকের কাছে নিজের পরিবারের অসহয়তার কথা তুলে ধরে সহানুভূতি পাওয়ারও চেষ্টা করে অভিযুক্ত। সব শুনে বিচারক তাকে আইনি সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি ১২ অক্টোবর ফের আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন। জবাবে দিল্লির এক আইনজীবীকে বনগাঁ আদালতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেয় অভিযুক্ত নইম৷ এরপর গত নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলে পুরো দস্তুর। আদালতে দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর অবশেষে মঙ্গলবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার শেখ নইমের সাজা ঘোষনা হতে পারে বলে জানান সরকারী আইনজীবী সমীর দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.