দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: এ যেন একেবারে হলিউডি থ্রিলার! পরকীয়ায় ‘পথের কাঁটা’ সরাতে প্রেমিকের সঙ্গে বসে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র ব্যুমেরাং হয়ে এল তরুণী নিজের জীবনেই। স্বামীর হাতে ‘খুন’ হতে হল তাঁকে। হাড়হিম কাণ্ড ঘটানোর পর থানায় আত্মসমর্পণ করে স্ত্রীকে হত্যার কথা কবুল করেছে স্বামী। সোমবার গভীর রাতে রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে সোনারপুরের মাহিনগরে। সকালে খুনের কথা জানাজানি হতে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকার মাহিনগরের ঘটনা যেন অবিকল সিনেমার চিত্রনাট্য! জানা গিয়েছে, ক্যানিংয়ের হেরোভাঙা এলাকার বাসিন্দা বাপি গায়েন। বছর আটেক আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন প্রতিবেশী প্রিয়াঙ্কাকে। বিয়ের পর বাপি পার্কসার্কাসের একটি কারখানায় চাকরি পান। তারপর স্ত্রীকে নিয়ে সোনারপুরের মাহিনগরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। ভাড়াবাড়ির পাশের ঘরে থাকতেন সুপ্রকাশ দাস ও তাঁর স্ত্রী। সূত্রের খবর, পাশাপাশি থাকার সুবাদে ধীরে ধীরে প্রিয়াঙ্কা ও সুপ্রকাশের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে গোপন প্রেম বেশিদিন গোপনও থাকেনি। বিষয়টি জানতে পারেন বাপি। তাঁর সংসারে অশান্তি শুরু হয়।
এসবের মাঝে স্ত্রীকে নিয়ে ওই ভাড়াবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান সুপ্রকাশ। তারপরও অবশ্য প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তাঁর প্রেম চলছিল। শোনা যায়, দু’জনে মাঝেমাঝে ধানমাঠ এলাকার একটি বাড়িতে গিয়ে একসঙ্গে সময় কাটাতেন। এসব খবর কানে পৌঁছয় বাপির। স্বভাবতই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাপি। অশান্তি থেকে বাঁচতে এবং পরকীয়ায় ‘পথের কাঁটা’ স্বামীকে সরাতে সুপ্রকাশের সঙ্গে মিলে বাপিকে হত্যার ছক কষে প্রিয়াঙ্কা। ফোনে এনিয়ে দু’জনে আলোচনার সময়ে প্রিয়াঙ্কার ষড়যন্ত্রের কথা শুনে ফেলেন বাপি। এরপরই নিজেকে বাঁচাতে বাপি উলটে স্ত্রীকেই খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এসব কথা নিজেই কবুল করেছে বাপি।
অভিযোগ, সোমবার রাতে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ঘুমিয়ে পড়তেই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন বাপি। স্ত্রীকে খুনের পর নিজের অপরাধ স্বীকার করে সোজা সোনারপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। অভিযুক্ত বাপিকে জেরা করে ঘটনার সম্পূর্ণ তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের পাশাপাশি আতঙ্কের পরিবেশ। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, বাপি-প্রিয়াঙ্কার মধ্যে মাঝেমধ্যেই অশান্তি হত। তবে এমন ঘটনা ঘটবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পরকীয়া থেকেই এই পরিণতি। তদন্ত শুরু করেছে সোনারপুর থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.