অঙ্কন: সুযোগ বন্দ্য়োপাধ্যায়।
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া এবার চাকদহে!
তিনদিন ধরে ঘরের মধ্যে স্ত্রীর মৃতদেহের পাশে শুয়ে স্বামী। বেজায় দুর্গন্ধ পেয়ে সোজা বাড়িতে হাজির হন প্রতিবেশীরা। যদিও ‘স্ত্রী অসুস্থ, ঘুমাচ্ছে’ বলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন স্বামী। তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। স্ত্রীর গা থেকে চাদর সরাতেই রহস্যের যবনিকা পাত। প্রতিবেশীরা নিশ্চিত হন, মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় নদিয়ার চাকদহ থানার মদনপুরের পূর্বপাড়ায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম ভারতী চন্দ (৫০)। স্বামী বাচ্চু চন্দের সঙ্গে প্রায় নয় মাস ধরে মদনপুর পূর্বপাড়ায় দীপিকা গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। একটি ফটোকপির দোকান চালান বাচ্চু। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন ভারতীদেবী। ডায়ালিসিসও চলছিল তাঁর। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিলেন বাচ্চু। নেশায় ডুবে থাকতেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভারতীকে গত সোমবার রাতে শেষবার দেখতে পেয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। তারপর থেকে তাঁকে আর ঘরের বাইরে দেখতে পাননি কেউই। ভারতী দেবীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। ঘরে ঘুমিয়ে আছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীদেবীর বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এরপরই ভারতীর বাড়িতে চড়াও হয় প্রতিবেশীরা।
বুলা চৌধুরী নামে প্রতিবেশী এক গৃহবধূ জানিয়েছেন,”ওই বাড়ি থেকে একটা দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। ভারতীদেবীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী ঘুমোচ্ছে।’ কিন্তু ওঁদের ঘরে ঢুকতে পারছিলাম না। প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। ঘরে ঢুকে ভারতীদেবীর শরীরের ওপরের ঢাকা দেওয়া কাপড় সরাতেই দেখি, উনি মারা গিয়েছেন। অথচ পাশেই কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ওর স্বামী।” তারা খবর দেওয়ার পর পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
এদিকে তিনদিন আগেই স্ত্রীর মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও সেই খবর কেন বাচ্চুবাবু প্রতিবেশীদের জানাননি, তা নিয়ে পুলিশের প্রাথমিক খটকা লাগে। বাচ্চুবাবুর মানসিক ভারসাম্য নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, স্ত্রীর কোন সময় মৃত্যু হয়েছে, তা পুলিশকে তিনি জানাতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত, অসুস্থতার কারণেই ভারতীদেবীর মৃত্যু হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাচ্চু চন্দের সঙ্গে ভারতীদেবী ওই ভাড়া বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে থাকতেন। কিন্তু বাচ্চুবাবু ভারতী দেবীর প্রকৃতই স্বামী কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান পুলিশ l
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.