ছবি: প্রতীকী
ধীমান রায়, কাটোয়া: আকন্ঠ মদ্যপান (Drunk) করে প্রায় প্রতিদিনই বাড়িতে অশান্তি, প্রতিবাদ করলে মারধর থেকে বাড়িতে ভাঙচুর – এসব লেগেই থাকত। নেশাগ্রস্ত স্বামীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন স্ত্রী। কিন্তু তাতে ব্যর্থ তো হয়েছেনই। উপরন্তু তাঁর পরিণতি হল মর্মান্তিক। মদ্যপানের প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত (Stab) করে ফেলে রেখে পাশেই সারারাত দিব্যি ঘুমিয়ে পড়লেন প্রাক্তন সেনাকর্মী স্বামী। পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম (Ketugram) থানায় পালিটা গ্রামের ঘটনা। জানাজানি হতে স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত গৃহবধূর নাম ফুলেশ্বরী ফৌজদার। শনিবার সকালে বাড়ি থেকে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। কেতুগ্রামের রামজীবনপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত (Death) বলে ঘোষণা করেন। এদিন দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, শুক্রবার গভীর রাতে বাড়িতে ফুলেশ্বরীদেবীকে নৃশংসভাবে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করা হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী সন্তোষ ফৌজদারকে আটক করেছে পুলিশ।
কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কৌশিক বসাক বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে শুক্রবার রাতে পারিবারিক অশান্তি থেকে ওই বধূকে চুরি দিয়ে শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত করা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে। আমরা অভিযুক্তকে আটক করেছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর শহরের উদয়ন পল্লির বাসিন্দা জয়দেব মণ্ডল ও দয়াময়ী মণ্ডলের মেয়ে ফুলেশ্বরীর ২৭ বছর আগে পালিটা গ্রামের বাসিন্দা মধুসূদন ফৌজদারের ছেলে সন্তোষের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। ফুলেশ্বরী দেবীর একমাত্র ছেলে বিশ্বনাথ কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বাড়িতে থাকতেন সন্তোষ, তাঁর বৃদ্ধ বাবা ও স্ত্রী। জানা গিয়েছে, সন্তোষ ফৌজদার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গাড়িচালকের কাজ করতেন। বছর দেড়েক আগে অবসর নিয়েছেন। অবসর নেওয়ার পর একটি মারুতি ভ্যান কিনে ভাড়া খাটানোর ব্যবসা করতেন।
নিহত বধূর মা দয়াময়ী মণ্ডল এই খুনের ঘটনায় অভিযোগকারী। তিনি জানিয়েছেন তার জামাই সন্তোষ মদের নেশায় আসক্ত ছিল। মদ্যপান করে বাড়িতে রোজ অশান্তি করত। ফুলেশ্বরীদেবীকে মারধর করত। ফুলেশ্বরীদেবী ফোনে বাপেরবাড়িতে জানাতেন। দয়াময়ীদেবী বলেন, “শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমার বেয়াই ফোন করে বলেন, তোমাদের মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না। সন্তোষ ওকে মেরে দিল।” ওই কথা শুনে কেতুগ্রামে এসে দেখি আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।”
শুক্রবার রাতে ওই ঘটনার পর এদিন শনিবার সকালে স্থানীয় এলাকা থেকে খবর পেয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ সন্তোষদের দোতলায় একটি ঘর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফুলেশ্বরীদেবীকে উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে ১৮-১৯ জায়গায় ছুরির আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে সন্তোষকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.