ছবি: প্রতীকী।
বাবুল হক, মালদহ: এ যেন বাস্তবের ‘হাম দিল দে চুকে সনম’। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা থেকে ত্যাগের পথে হাঁটলেন স্বামী। আট বছর সংসার করার পরও দাম্পত্যে ইতি টেনে সালিশি সভায় দায়িত্ব নিয়ে নিজের স্ত্রীকে পড়শি কলমিস্ত্রির হাতে তুলে দিলেন রাজমিস্ত্রি। এমনই ঘটনা ঘটেছে মালদহের (Maldah) হরিশ্চন্দ্রপুর তুলসিহাটা এলাকার।
পাঁচ বছরের সন্তান আর স্বামীকে ছেড়ে প্রেমের (Love) টানে পাশের পাড়ার কলমিস্ত্রির সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন মহিলা। কয়েক মাস পরে দু’জনে ফিরে আসেন গ্রামে। এ নিয়ে গ্রামজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তাঁর বউকে নিয়ে রাজমিস্ত্রিকে পড়শিদের কাছ থেকে নানা কটূক্তি শুনতে হয়। এ নিয়ে গ্রামে সালিশি সভা বসে। সেই ভরা সভায় নিজের স্ত্রীকে প্রেমিক কলমিস্ত্রির হাতে তুলে দিলেন রাজমিস্ত্রি স্বামী। পুরো বলিউডি সিনেমার বাস্তব রূপ!
স্বামী মতিলালকে ছেড়ে প্রেমিক তাপসের সঙ্গে সংসার জীবন শুরু করার সামাজিক ‘অনুমোদন’ও পেয়েছেন স্বপ্না সিংহ। গ্রামসভায় পরকীয়া সম্পর্কে প্রকাশ্যে সিলমোহর দিয়ে দিলেন মতিলাল। এই রাজমিস্ত্রি খুইয়েছেন আট বছরের সংসার জীবন। অন্যদিকে, বাড়িতে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকা সত্ত্বেও প্রেমিকা স্বপ্নার সঙ্গেও সংসার গড়তে হবে কলমিস্ত্রি তাপস সিংহকে। মতিলালের সম্মতি পেয়ে এমনই নিদান দিয়েছেন সভায় উপস্থিত প্রতিবেশীরা। বছর আটেক আগে সামাজিক রীতি অনুযায়ী, বিহারের (Bihar) আবাদপুর থানার লক্ষীটোলা গ্রামের মেয়ে স্বপ্না সিংহকে বিয়ে করেছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা এলাকার বাসিন্দা মতিলাল সিংহ। পেশায় রাজমিস্ত্রি তিনি। বিয়ের পর থেকে সংসার ঠিকঠাক চলছিল। তাঁদের পাঁচ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
মতিলালের অভিযোগ, প্রায় এক বছর ধরে স্বপ্নাদেবীর চালচলন দেখে তাঁর সন্দেহ হচ্ছিল। দিদির বাড়ি যাওয়ার নাম করে পাঁচদিন, সাতদিন কাটিয়ে ফিরতেন স্বপ্না। গভীর রাত পর্যন্ত কারও সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেন তাঁর স্ত্রী। মতিলাল বলেন, “ঘনঘন মোবাইলে কথা বলত। কার সঙ্গে কথা বলছে বুঝতে পারতাম না। আমি মোবাইলটা কেড়ে নিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল!” গ্রামেরই এক কলমিস্ত্রি তাপস সিংহ। তাঁর বাড়িতেও স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাপস মাঝেমধ্যে দিল্লি চলে যেতেন কলমিস্ত্রির কাজ করতে। সালিশি সভায় গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে তাপস জানিয়েছেন, স্বপ্নার সঙ্গে তাঁর এক বছরের সম্পর্ক। যখনতখন তিনি স্বপ্নাকে নিয়ে হোটেল-রেস্তঁরায় যেতেন। শেষবার স্বপ্নাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দিল্লি চলে যান।
তাপসের কথায়, “আমার স্ত্রী সবকিছু জানত। সে বলেছিল, ‘স্বপ্নাকে বাড়িতে নিয়ে এসো। আমাদের দু’জনের একসঙ্গে বাড়িতে থাকতে সমস্যা হবে না’। তাই দিল্লি থেকে দু’জনে ফিরে এসেছি।” কিন্তু এই ধরনের পরকীয়া মানতে চায়নি গ্রাম। শনিবার রাতে গ্রামেই বসে সালিশি সভা। সেখানে স্বপ্নাও তাপসের সঙ্গে সম্পর্ক এবং পালিয়ে গিয়ে দিল্লিতে থাকার ঘটনা সালিশি সভায় স্বীকার করে নেন। উপস্থিত বাসিন্দাদের পরামর্শ ও নিদান মেনে সেই ভরা সভায় স্ত্রী স্বপ্নাকে তাপসের হাতে তুলে দেন মতিলাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.