ধীমান রায়, কাটোয়া: তীব্র গরম। এই অসহনীয় পরিবেশের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ণকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর উষ্ণায়নের প্রধান কারণ নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করা। এমনই প্রচার করা হয়ে থাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে। সামনে আনা হচ্ছে, ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান।’ ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’ ইত্যাদি স্লোগান। এই সচেতনতার মাঝেই চলছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন।
রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থেকে কেতুগ্রামে নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে বহু পুরনো গাছ। এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছেন পরিপেশপ্রেমীরা। সকলেরই দাবি, গাছ বাঁচিয়ে রাস্তার কাজ করা হোক।
সম্প্রতি ভাতারের মুরাতিপুর থেকে গুসকরা শহর হয়ে আউশগ্রামের গোন্না এলাকা পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে পূর্তদপ্তর। জানা গিয়েছে, আগের থেকে আরও আড়াই ফুট চওড়া করা হচ্ছে রাস্তাটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই রাস্তার ধারের কয়েকশো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যে সমস্ত বৃক্ষ প্রায় শতাব্দীকাল ধরে ছায়া দিয়ে এসেছে ক্লান্ত পথিকদের। যে সমস্ত গাছ গ্রামবাংলার বহু পাখির আশ্রয়স্থল। সেই সমস্ত পুরনো গাছগুলি কেটে ফেলায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ।
ঠিক একই চিত্র দেখা গিয়েছে কেতুগ্রাম এলাকাতেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের রসুইঘাট থেকে পালিটা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হবে। এই রাস্তার দু’ধারে রয়েছে অসংখ্য গাছ। এইসব গাছ রাস্তার কাজের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০-র বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আরও কম করে সাড়ে তিনশো গাছ কাটা হতে চলেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। যদিও কেতুগ্রামের বিল্বশ্বর পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বনদপ্তরের অনুমতি নিয়েই গাছগুলি কাটা হচ্ছে। কাটোয়া মহকুমা বন আধিকারিক সুকান্ত ওঝা বলেন, “রাস্তা সম্প্রসারণের কাজের জন্য গাছগুলি কাটার আবেদন করেছিল বিল্বশ্বর পঞ্চায়েত। তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
কয়েক বছর আগে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কপথের সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজেও একইভাবে ভাতার এলাকায় অসংখ্য গাছ কাটা পড়েছিল। সেই থেকে রাস্তার দুধার কার্যত খাঁ খাঁ করছে। ভাতারের এরুয়ার গ্রামের বাসিন্দা পরিবেশপ্রেমী ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তা চওড়া হোক এটা সকলেই চাই। কিন্তু সেই সঙ্গে গাছ বাঁচানোও একান্ত জরুরি। কীভাবে গাছ বাঁচিয়ে রাস্তার কাজ করা যায় এটা যদি সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করা হত তাহলে এতগুলি বৃক্ষকে হত্যার প্রয়োজন হত না।” ধনঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, তিনি এনিয়ে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন। তবে পূর্ব বর্ধমান জেলাশসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব এনিয়ে বেশিকিছু মতামত দেননি। তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
[যন্ত্র বিকলে বর্ধমান মেডিক্যালে ব্যাহত পরিষেবা, বিপাকে ক্যানসার রোগীরা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.