প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্যপ্রাণ বাঁচানোর নজির রাখলেন একদল মানুষ৷ হাতিকে লোকালয় থেকে দূরে রাখার মতো গুরু দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে৷ সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পরও বড় দুর্ঘটনা থেকে তাঁদের বাঁচালেন পুরুলিয়ার হুলা পার্টির সদস্যরা৷
ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা দশ। একেবারে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির সুইসায় ঝড়বৃষ্টির দাপট৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারে চান্ডিল–মুরি রেলপথে সুইসার ডাংডু ঘাট–নোয়াডির মাঝে রেললাইনে আলো জ্বালিয়ে দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছে একটি পণ্যবাহী ট্রেন। অন্যদিকে, বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে একটি শাবক-সহ আটটি হাতির দল উঠতে যাচ্ছিল সেই রেললাইনেই। চোখের সামনে হাতির দলের এমন বিপদ দেখে স্বতস্ফূর্তভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন হুলা পার্টির সদস্যরা৷ চিৎকার করে অন্যদেরও সতর্ক করলেন৷ যাদের জন্য এই ইঙ্গিত, তারা তো কিছু বোঝে না৷ তাই তাদের বাঁচাতে হুলা পার্টির কয়েকজন নিজেদের জীবন বিপন্ন করেই রেললাইনের পাশে একেবারে হাতির দলের সামনে গিয়ে ঢাক–ধামসা–টিন বাজিয়ে রেলট্র্যাকে ওঠা থেকে বিরত করলেন। প্রাণ বাঁচল আটটি হাতির। নইলে দ্রুতগতির ট্রেনের ধাক্কায় হাজারিবাগের বুনো হাতির দল থেকে আট সদস্যবিয়োগ আটকানো যেত না৷
বুধবার রাতে হুলা পার্টির এমন উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করেছেন বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজ কুমার মল্ল। তাঁর কথায়, ‘এখন তো আর হাতিকে লোকালয় থেকে অন্যত্র সরাতে আগুন ব্যবহার করা যায় না৷ তাই রাতে টর্চের আলো আর ঢাক–ধামসা–টিন বাজানোই হাতিয়ার। হুলা পার্টির দল যেভাবে হাতির দলকে বাঁচাল তা তারিফ করার মত। না হলে করুণ পরিণতি হত।’ হুলা পার্টির এই কৃতিত্বের কথা পৌঁছে গিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগের কানেও। তারাও সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, ‘দলে থাকা হাতিরা এমনই হয়। তাদের লিড করা দাঁতাল যদি চলার পথে না থামে তাহলে অন্যান্য হাতিরাও তার পিছনে চলতেই থাকবে। রেললাইনের কাছে সেই কারণেই বিপদ হয়।’ তবে এই কাজে হুলা পার্টির সদস্যের জীবনে ছিল উভয় সংকট। হাতির দলের সামনে পড়ে যাওয়ায় আহত হতে পারতেন৷ আবার রেললাইনের একেবারে পাশে চলে যাওয়ায় ট্রেনেও হতে পারত বিপদ৷ প্রসঙ্গত, এই হাতির দলটি গত রবিবার থেকে ঝালদা–বাঘমুন্ডিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বাঘমুন্ডির কালিমাটি বিটের গুসাইডিতে দুটি কুঁড়েঘর ভাঙে। তছনছ করে দেয় অনেক জমির ফসল।
এই দলটিকে তাড়ানোর দায়িত্ব পাওয়া হুলা পার্টির দল এভাবে হাতির প্রাণ বাঁচিয়ে প্রমাণ দিল, শুধু তাড়িয়ে বেড়ানোই নয়, বিপদের মুখ থেকে তাদের উদ্ধার করার গুরুদায়িত্বও সফলভাবে পালন করলেন তাঁরা৷ আর এটাই বোধহয় মানুষ- বন্যপ্রাণীর সহাবস্থানের সবচেয়ে সুন্দর ছবি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.